তিনি বলেছেন, “পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অভিযোগের চিঠিটা আমরা পেয়েছি। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা পদ্মা ব্যাংকের কাছে তাদের বক্তব্য জানতে চাইব।”
শনিবার ঢাকায় ইকোনমিক
রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক
আলোচনা অনুষ্ঠানে
বিএসইসি চেয়ারম্যান
এ কথা
বলেন।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের
অভিযোগ, চৌধুরী
নাফিজ সরাফাত
‘বিধি ভেঙে’
ব্যাংকের ১০০
কোটি টাকা
একটি তহবিলে
বিনিয়োগ করেছেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন,
“আমরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছেও বিষয়টি জানব। সব কিছু চেক করে আমরা দেখে নেব কোন তথ্যটা সঠিক। দেশের আইন অনুযায়ী যা হবার তা হবে, এখানে আমাদের বিচ্যুতি হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
পাল্টাপাল্টি অভিযোগে আলোচনায় পদ্মা ব্যাংক, ‘খতিয়ে দেখবে’ বিএসইসি
অনিয়ম আর ঋণ
কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকের
মালিকানা ও
ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে।
সে সময়
চাপের মুখে
চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের
সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান
আলমগীর।
পরের বছর ফারমার্স
ব্যাংকের চেয়ারম্যান
হন চৌধুরী
নাফিজ সরাফাত,
যিনি রেইস
অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট
পিএলসি এবং
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি
বোর্ডেরও চেয়ারম্যান।
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত
মহীউদ্দীন খান আলমগীর
গত ৭
মার্চ বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নরকে
চিঠি লিখে
চৌধুরী নাফিজ
সরাফাতের বিরুদ্ধে
তার অভিযোগের
কথা তুলে
ধরে তদন্ত
করে ব্যবস্থা
নিতে অনুরোধ
করেন।
চিঠির অনুলিপি অর্থমন্ত্রী,
অর্থ মন্ত্রণালয়ের
আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বিভাগের জ্যেষ্ঠ
সচিব এবং
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ
অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ
কমিশনেও পাঠানো
হয়।
সেখানে বলা হয়,
২০১৫ সালের
১ নভেম্বর
তিনি যখন
ব্যাংকের চেয়ারম্যান,
তখন তার
‘অনুপস্থিতিতে’ ফারমার্স ব্যাংক পর্ষদের এক
বৈঠকে একটি
অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে ১০০ কোটি
টাকার বিনিয়োগ
অনুমোদন করা
হয়।
সেই বৈঠকের একটি
বোর্ড মোমোর
ফটোকপি সম্প্রতি
হাতে পাওয়ার
পর ওই
বিনিয়োগের বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে
ব্যাংকের স্পন্সর
শেয়ারহোল্ডার মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ভাষ্য।
তার চিঠিতে বলা
হয়, “আমি
জানতে পেরেছি,
চৌধুরী নাফিজ
সরাফাত সে
সময় অল্টারনেটিভ
ইনভেস্টমেন্ট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান/এমডি
হিসেবে বিনিয়োগের
ওই অর্থ
নেন। তাতে
আইনের ব্যত্যয়
ঘটানো হয়,
কারণ তিনি
তখন ব্যাংকের
একজন পরিচালক
এবং আইন
অনুযায়ী তিনি
পরিচালক থাকা
অবস্থায় ফারমার্স
ব্যাংক থেকে
কোনো তহবিল
পেতে পারেন
না।”
বাংলাদেশের ব্যাংকিং কোম্পানি
আইনের ২৭
এর ২
ধারায় বলা
আছে, কোনো
ব্যাংক এমন
কোনো প্রতিষ্ঠানকে
ঋণ দিতে
পারবে না,
যেখানে ব্যাংকটির
কোনো পরিচালক
যুক্ত থাকবেন
পরিচালক বা
পার্টনার হিসেবে।
আর তখনি ঋণ
অনুমোদন করা
যাবে, যখন
বেশির ভাগ
পরিচালক এর
পক্ষে মত
দেবেন। তবে
যে পরিচালক
সেই প্রতিষ্ঠানে
আছেন, তার
মতামত এখানে
গ্রহণযোগ্য হবে না।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর
তার চিঠিতে
বলেছেন, সেই
অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে এ
পর্যন্ত কোনো
লভ্যাংশ পদ্মা
ব্যাংককে ‘দেওয়া হয়নি’, মূল টাকাও
তারা ‘ফেরত
দেয়নি’।
“ওই তহবিল বেআইনিভাবে
অনুমোদন করা
হয়েছে এবং
যেভাবে ব্যাংকের
মূলধন থেকে
ওই টাকা
বিনিয়োগ বা
সরানো হয়েছে,
তাতে গুরুতর
অনিয়ম ঘটেছে।”
বিষয়টি তদন্ত করে
জড়িতদের চিহ্নিত
করার পাশাপাশি
বিনিয়োগের ওই টাকা ব্যাংকে ফেরত
আনার ব্যবস্থা
নিতে আবেদন
করা হয়েছে
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের চিঠিতে।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে মহীউদ্দীন
খান আলমগীর
বলেছিলেন, “এ ধরনের কাজের শাস্তি
হওয়া উচিত।
এখানে জনগণের
টাকা লুট
করা হয়েছে।”
এত দিন পরে
কেন এই
অভিযোগ করলেন-
সেই প্রশ্নে
ব্যাংকের সাবেক
চেয়ারম্যান বলেছিলেন, “ব্যাংকের কতিপয় কর্মচারী
মিলে বিষয়টি
লুকিয়ে রেখেছিল।
এখন বিষয়টি
আমার হাতে
এসেছে, তাই
আমি জানিয়েছি।”
ফারমার্স ব্যাংক এখন পদ্মা ব্যাংক
ফারমার্সের নাম-গন্ধ মুছে ফেলতে চান এমডি
বিনিয়োগকারীদের টাকা রেইস লগ্নি করেছে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে: বিশ্লেষক
ফারমার্স ব্যাংকের শাখা এখন ৫৪টি
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ওয়েবসাইটে দেখা
যায়, অল্টারনেটিভ
ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায়
আছে স্ট্রাটেজিক
ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট
লিমিটেড। আর
ট্রাস্টি হিসেবে
আছে প্রিমিয়ার
ব্যাংক লিমিটেড।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদে
একজন স্বতন্ত্র
পরিচালক হিসেবে
আছেন চৌধুরী
জাফরউল্লাহ শারাফাত, যিনি পদ্মা ব্যাংকের
চেয়ারম্যান নাফিজের বড় ভাই।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর
যেদিন গভর্নরকে
চিঠি দিয়েছেন,
সেই একই
তারিখে পদ্মা
ব্যাংকের পক্ষ
থেকে বিএসইসিকে
একটি চিঠি
পাঠিয়ে তার
বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের’
অভিযোগ করা
হয়।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক এহসান
খসরুর স্বাক্ষরে
পাঠানো ওই
চিঠিতে বলা
হয়, চেয়ারম্যান
থাকার সময়
মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকের কাজে
‘সরাসরি হস্তক্ষেপ
করে ঋণ
অনুমোদন করিয়েছেন’।
এরকম ১৯ গ্রাহকের
কাছ থেকে
খেলাপি ঋণের
৮৪৫ কোটি
৪৫ লাখ
টাকা ফেরত
পেতে পদ্মা
ব্যাংক মহীউদ্দীন
খান আলমগীরের
কাছ থেকে
‘সাহায্য চাওয়া
হয়েছে’ বলেও
চিঠিতে লেখা
হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে,
গ্রাহকের ঋণ
হিসাব থেকে
বিভিন্ন সময়ে
৮ কোটি
৩৩ লাখ
৭৫ হাজার
টাকা ‘মহীউদ্দীন
খান আলমগীরের
মালিকানাধীন সিটি মেডিকেল কলেজ ও
হাসপাতালে সরানো হয়েছে’।
অন্যদিকে পদ্মা ব্যাংকের
অভিযোগ অস্বীকার
করে মহীউদ্দীন
খান আলমগীর
বলেছেন, সিটি
মেডিকেল কলেজ
অ্যান্ড হাসপাতালে
তার ‘কোনো
শেয়ার নেই’। যেসব অভিযোগ পদ্মা ব্যাংক
করেছে তা
‘মিথ্যা’।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের
অভিযোগের বিষয়ে
কথা বলতে
পদ্মা ব্যাংকের
বর্তমান চেয়ারম্যান
চৌধুরী নাফিজ
সরাফাতকে কয়েকবার
ফোন করেও
তার সাড়া
পায়নি বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ফারমার্স ব্যাংক লুটপাটে প্রতিষ্ঠাতারা: মুহিত