ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের
একটি গার্ডার ধসে পড়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে রোববার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই
দাবি করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “একটা ঘটনা ঘটেছে আজকেই আপনারা দেখেছেন, এয়ারপোর্টের
সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসের গার্ডার ভেঙে পড়েছে এবং চারজন ইনজুরড হয়েছে, দুজন চীনাসহ।
“চিন্তা করেন, এই জনগণের টাকা নিয়ে যে সমস্ত তৈরি করা হচ্ছে, সেটা
হঠাৎ করে ভেঙে পড়ছে। তাহলে এসব প্রকল্পের মান কী হচ্ছে? আমরা বার বার বলছি, এই
মেগা প্রজেক্ট দিয়ে উন্নয়নের ধুয়া তুলে আপনি দেশটাকে একেবারে ফোকলা করে দিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “গোটা বাংলাদেশের উন্নয়ন কিন্তু তাই হচ্ছে এখন। এই
উন্নয়ন মানে হচ্ছে যে, মানুষের পকেট কেটে তারা তাদের পকেট ভারী করছে। এই সমস্ত
কমিশন এজেন্সি, এই সমস্ত টাকা-কন্ট্রাক্ট সব কিছু তাদের।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে বিএনপির
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লেখা ‘কুপির বাতির গণতন্ত্র’ গ্রন্থের
মোড়ক উন্মোচণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “রাজনীতিকে একেবারে অন্ধকার ঘরে নিয়ে চলে গেছে। একটা
নোংরা, একটা নর্দমাতে নিয়ে গিয়ে উপস্থিত করেছে। যেখানে কুপি বাতি দিয়েও খুঁজে পাওয়া
যাবে না।
“এই অন্ধকারের মধ্যে অন্তত কুপি বাতির আলোটা জ্বালিয়ে যিনি নিজেকে
আমাদের সামনে আরও বেশি মহান করে তুললেন, সেই সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাহেবের এই
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি নিজে ধন্য হয়েছি।”
তিনি বলেন, “কুপি বাতির বরাতে গণতন্ত্রকে আলোতে নিয়ে আসতে হবে।
আলালের বই থেকে আপনারা সেই জায়গাগুলো বের করে নেবেন, সেখানে আমরা ভবিষ্যতের আলো
দেখতে পাব।”
নিজের গ্রন্থ নিয়ে সাবেক সাংসদ আলাল বলেন, “কুপি বাতি কেন? কুপি
বাতি হচ্ছে এই কারণে যে, সেই কুপি বাতি আমলের কথা স্মরণ করা। যখন বিদ্যুৎবিহীন
সমাজ ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত মানুষরা ছিলেন। সেই মানুষের
সংখ্যা আজ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
“এই কারণে আমাদের ডিজিটাল সিস্টেমের অনেক কিছু আমাদের ভালো লাগে
না, আমরা এনালগে ফিরে যেতে চাই। যে এনালগে আমরা জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই,
জীবনের দর্পন খুঁজে পাই। সেই দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার যে তাগিদ সেই তাগিদ থেকে আমার
মধ্যে একটা চেতনা কাজ করেছে-যে এলইডির আলোকে যত আলোকিত হোক, আজকে উন্নয়ন যে পর্যায়
গিয়ে পৌঁছুক, কুপি বাতির যে অবস্থা গণতন্ত্র সে পর্যায়ে রয়ে গেছে।”
আলাল বলেন, “১৯৭০ সালে আইয়ুব খান-ইয়াহিয়া খানের আমলে নির্বাচন
হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে নৌকার পক্ষে ভোট দিয়েছে, সেই দিনও তো
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি।
“আজকে ৫০ বছর পরে নির্বাচনের ধ্বংসস্তূপ আমরা দেখতে পারছি।
নির্বাচন কমিশন এখন নাম পরিবর্তন করে নির্বাসন কমিশন হয়েছে। যেখান থেকে গণতন্ত্রকে
নির্বাসন করা হয়। তাহলে কুপিবাতি বলব না কী বলব?”
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল আলাল রংপুর কারাগারে থেকে
জামিনে মুক্তির পর কারাফটকে পুনরায় গ্রেপ্তার হন, সে খবর শোনার পর মারা যান তার মা
উম্মে কুলসুম।
অনুষ্ঠানে আলাল সেই ঘটনা তুলে ধরে অশ্রুনয়নে বলেন, “আমি কারাগারে
ছিলাম। আমার মা মারা গেছে, আমাকে তিন দিন পরে জানানো হয়েছে। আমি আমার মায়ের
লাশটাও দেখতে পারি নাই। এদেশের রাজনীতি করার অপরাধটা কি এই?”
গ্রন্থটি আলাল তার প্রয়াত মা উম্মে কুলসুম, প্রয়াত বাবা সৈয়দ
আলতাফ হোসেন এবং জিয়াউর রহমানকে উৎসর্গ করেন। বইটির দাম ৩৬০ টাকা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক সৈকতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম
ওবায়দুল ইসলাম, সাবেক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ
সম্পাদক ইলিয়াস খান, গ্রন্থের প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির এবিএম মোশাররফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, অনিন্দ্র্য
ইসলাম অমিত, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, হেলেন জেরিন খান, শাহ নেসারুল হক,
মাইনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।