ক্যাটাগরি

শহীদ মিনারের মর্যাদা: রায় বাস্তবায়ন কতদূর, জানতে চায় হাই কোর্ট

মন্ত্রিপরিষদ সচিব,
মুক্তিযুদ্ধ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান
স্থপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

১০ বছরেও হাই কোর্টের
রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমানননার অভিযোগ আনতে আবেদন
করা হয় রিটকারী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবির পক্ষ থেকে।

সে আবেদনের শুনানির
পর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্টে বেঞ্চ রোববার এ আদেশ
দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে
শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত
তালুকদার।

আইনজীবী মনজিল পরে
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদ মিনারের মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্যতা, পবিত্রতা
সংরক্ষণে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে ১১ বছর আগে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন
হয়নি। এর আগেও রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে কয়েকবার আদালতের শরনাপন্ন হতে হয়েছে।
কিছু কিছু নির্দেশনার বাস্তবায়ন হলেও জাদুঘর নির্মাণ, ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত তালিকা
তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। যে কারণে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে
আবেদন করা হয়েছিল।

আদালত আগামী ২৫ এপ্রিল
পরবর্তী আদেশের তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।”

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের
মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্যতা ও পবিত্রতা সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেছিল
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি
শেষে ২০১০ সালের ২৫ অগাস্ট হাই কোর্ট ৮ দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়। বিষয়টি চলমান তদারকিতে
থাকবে বলেও রায়ে বলে দেওয়া হয়।

৮ নির্দেশনা

১. কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনারের নির্ধারিত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করে ওই এলাকায় কোনো ভবঘুরে
যাতে ঘোরাফেরা করতে না পারে, সে ব‌্যবস্থা নিতে হবে। ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ যাতে চলতে
না পারে, সেজন‌্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. শহীদ মিনারের মূল
বেদীতে কোনো ধরনের মিটিং, মিছিল, পদচারণা, আমরণ অনশন করা থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মূল বেদীতে ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলতে এবং
ভাষা সৈনিকসহ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের মরদেহে সর্বস্তরের জনগণের সম্মান প্রদর্শনের জন্য
শহীদ মিনারের মূল বেদী ব্যবহার বা বিশেষ দিনে ফুল দিতে কোনো বাধা থাকবে না। মূল বেদীর
পাদদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাতেও কোনো নিষেধ থাকবে না। শহীদ
মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কমপক্ষে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেবে পূর্ত মন্ত্রণালয়।
আর ঢাকা সিটি করপোরেশন তিনজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেবে।

৩. ভাষা আন্দোলনে যারা
শহীদ হয়েছেন, তাদের সবাইকে মরণোত্তর জাতীয় পদক এবং জীবিতদের জাতীয় পদক দেওয়ার ব্যবস্থা
নেবে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভাষা শহীদদের ছবি সম্বলিত সংক্ষিপ্ত
জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে বোর্ড বা ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করে প্রদর্শনের ব‌্যবস্থা করবে।

৪. ভাষা সৈনিকদের মধ‌্যে
জীবিত কেউ যদি সরকারের কাছে আবেদন করে, তাহলে তাদের ‘যথাযথ আর্থিক সাহায্য এবং চিকিৎসার
ব্যবস্থা’ সরকারকে করতে হবে।

৫. সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের
সচিব ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে

একটি এবং জেলায় জেলায়
ডিসিদের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ব‌্যবস্থা করবেন। কমিটির সদস্য হবেন ভাষা সৈনিক, কবি,
সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা। ওই তালিকা যাচাই বাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ
করতে হবে।

৬. কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনারের পাশে একটি লাইব্রেরিসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে। সেখানে সার্বক্ষণিক গাইড
থাকবে। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলি) সন্নিবেশিত করে বাংলা
ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার তৈরি করে জাদুঘরে রাখতে হবে, যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভাষা
আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন। পূর্ত মন্ত্রণালয়কে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ‌্যে
জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।

৭. জীবিত ভাষা সৈনিকদের
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করতে হবে এবং সরকারের সাধ্যমত সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা
তাদের দিতে হবে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়সহ
সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।

এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন
না হওয়ায় এর আগে ২০১২ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। তখন সংস্কৃতি সচিব আদালতে
হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

এরপরও আদালতের রায়
সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালে এক সম্পূরক আবেদন করা হয় এইচআরপিবির পক্ষ থেকে।

তখন আদালত কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনারের পাশে একটি পাঠাগারসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণের আদেশ বাস্তবায়নে সরকার কী
পদক্ষেপ নিয়েছে- তা জানতে চায়।

ছয় মাসের মধ্যে সংস্কৃতি
সচিবকে হলফনামা করে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

এরপর কেটে গেছে আরও
চার বছর। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিবাদিদের বিরুদ্ধে
আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে গত ৪ মার্চ আবেদন করেন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল
মোরসেদ।