সোমবার সদর উপজেলার
দাঁতভাঙ্গা তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌসিফ রহমান মেলা উদ্বোধন করেছেন।
জুম বীজ বৈচিত্র্য মেলায় বিভিন্ন জাতের বীজ দেখছেন জুমচাষিরা
পরে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে তৌসিফ রহমান বলেন, পাহাড়ে কিছু বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন বীজ সংরক্ষণের
দিকে মনোযোগ বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণ করে বীজভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। কোনো
ফসল ও শস্য বিলুপ্ত অথবা হারিয়ে গেলে যাতে তা বীজভান্ডার থেকে ফিরিয়ে আনা যায়।
তিনি বলেন, জুমের ঐতিবাহী
যে বীজগুলো রয়েছে তা দিয়ে প্রতিবছর চাষ করতে হয়। এক বছর চাষ না করলে পরের বছর আর বীজ
পাওয়া যাবে না। অনেক সময় বীজ না পাওয়ার আশঙ্কায় জুমিয়ারা চাষ করতে বাধ্য হন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম
বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির বান্দরবান জেলা সভাপতি জুয়ামলিয়ান বলেন, যুগ যুগ ধরে
জুমচাষ করে আসলেও কোন মাটিতে, কোন বন-জঙ্গলে কোন বীজের ফল ভালো হবে এ নিয়ে কোনো গবেষণা
হয়নি।
জুম বীজ বৈচিত্র্য মেলায় বিভিন্ন জাতের জুম বীজ ও জুমের ফসল
“ঠিক সময়ে জুমক্ষেত
কাটা, জুম পোড়ানো এবং বীজ লাগানো না হলে ঠিকমতো ফসলও পাওয়া যাবে না। মাটির উর্বরতা
কমে আসায় জুমফসল উৎপাদন কমে আসছে। এরপরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা জুমিয়া রয়েছে তারা অন্য
কোনো বিকল্প চাষাবাদ পদ্ধতি না থাকায় এখনও জুমচাষ করতে বাধ্য হয়।”
স্থানীয় পাড়াবাসী লবক
তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, জুমচাষের পাশাপাশি ছড়া ও ঝিরি-ঝরনায় পাথর ও গাছ সংরক্ষণের মাধ্যমে
পরিবেশ রক্ষা করা দরকার। পনেরো বছর আগে থেকে পাড়ার ঝিরির পাশে গাছ সংরক্ষণের কারণে
শুষ্ক মৌসুমে এই পাড়ার বাসিন্দাদের পানির সংকটে ভুগতে হয় না।
জুম বীজ বৈচিত্র্য মেলায় বিভিন্ন জাতের জুম বীজ ও জুমের ফসল
আয়োজক সংস্থা তারুম
ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (টিডিও) বান্দরবান জেলা সমন্বয়ক জোনাহ চাক বলেন, জুম বীজ
মেলায় চিম্বুক পাহাড়ের দুটি ম্রো পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার একটি খুমী পাড়া এবং দাঁতভাঙ্গা
তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াসহ চারটি পাড়াবাসীদের ৭০টির বেশি জাতের জুমবীজ ও জুমের বিভিন্ন ফসল
স্থান পেয়েছে।
এসব পাড়ার জুমিয়া পরিবারদের
মধ্যে জুমের বিভিন্ন জাতের বীজ আদান-প্রদান করা হয়েছে। এই বছর মার্চ মাসে জুমক্ষেত
কাটা ও পোড়ানো শেষে এপ্রিল মাস থেকে জুমের বিভিন্ন বীজ লাগানো শুরু হবে।
জুম বীজ বৈচিত্র্য মেলায় বিভিন্ন জাতের জুম বীজ ও জুমের ফসল
বীজ বৈচিত্র্য মেলায়
অংশ নেওয়া জুমচাষিরা জানিয়েছেন, সব জাতের বীজ সবার কাছে থাকে না। অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ
করতে হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের বীজ একসঙ্গে পাওয়ার কারণে যার যে বীজ
প্রয়োজন তা সংগ্রহ করতে পেরেছে।
দাঁতভাঙ্গা পাড়া কারবারী
রাঙ্গাসিং তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন তারুম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের
(টিডিও) কর্মকর্তা লিসা চাকমা, বসুমতি তঞ্চঙ্গ্যা ও বুদ্ধজ্যোতি চাকমা।
উদ্বোধন শেষে মেলায়
আসা দর্শণার্থীরা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।