১৭ থেকে ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের কেন্দ্রীয় ওই আয়োজনের পাঁচ দিন তারা যোগ দেবেন।
সোমবার ফরেইন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে তাদের সফরের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রী বলেন, মূলত উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে প্রতিবেশী দেশগুলোর অতিথিদের এই সফর। তবে প্রত্যেক দেশের সঙ্গে কোনো না কোনো বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থার রেখেই করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়েও রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সফরে সম্মতি দিয়েছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৭, ২২ ও ২৬ মার্চ তারিখের আয়োজনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭, ১৯, ২২, ২৪ ও ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।
প্যারেড গ্রাউন্ডের আয়োজনে ১৭ মার্চ সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। এরপর ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দশ দিনব্যাপী এ আয়োজনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের বক্তব্য ও ভিডিও বার্তা ছাড়াও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা থাকবে।
২৬ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে; যা পরে ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে প্রদর্শন করা হবে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে ১৭-১৯ মার্চ সস্ত্রীক ঢাকা সফরে আসবেন।
তার সফরসঙ্গী হিসাবে তার স্ত্রী ফার্স্টলেডি ফাজনা আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্ৰী আব্দুল্লাহ শহীদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্ৰীসহ মোট ২৭ জন অতিথি আসবেন।
১৭ মার্চ সকলে বিমানবন্দরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রতি।
তারপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সম্মান জানাবেন।
১৭ মার্চ বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ।
পরদিন সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রপ্রতির আতিথেয়তায় বঙ্গভবনে সন্ধ্যায় একটি রাষ্ট্রীয় ভোজে যোগ দেবেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।
সফর শেষে ওই দিনই রাতেই দেশে ফিরে যাবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্র ভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আমরা আশা করছি।”
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে আগামী ১৯-২০ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ন ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল থাকবে তার সঙ্গে।
১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে ঢাকা পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে ২১টি গান স্যালুট এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।
রাজাপাকসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বিকালে তিনি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশেষ অনুষ্ঠানমালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন রাজাপাকসে। ২০ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করবেন।
এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নেবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “এ বৈঠকে দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলী যেমন- বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়াবলীতে পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্ব পাবে। বৈঠক শেষে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।”
ওইদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে সন্ধ্যায় কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী
নেপালের রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নেপালের ২২-২৩ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।
বাংলাদেশে নেপালের কোনো রাষ্ট্রপতির প্রথম সফর হবে এটি। এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নেপাল সফর করেছিলেন।
বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী ২২ মার্চ সকালে ঢাকা পৌঁছাবেন এবং সেখান থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন।
বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। পরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নেপালের রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও নেপালের শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি সাংস্কৃতিক পর্বেরও আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় নেপালের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফী বিনতে শামস বলেন, “উভয় রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।”
ওইদিন রাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন নেপালের রাষ্ট্রপতি ভাণ্ডারী।
পরদিন ২৩ মার্চ নেপালে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
তার সঙ্গে নেপালের প্রতিনিধি দলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা থাকবেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৩-২৫ বাংলাদেশ সফর করবেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রাচার প্রধান আমানুল হক বলেন, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ভুটানের রাজাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত ভুটানের রাজা আসতে অপারগ হওয়ায় তার প্রতিনিধি হিসেবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ সফরে আসছেন।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
আমানুল হক বলেন, “দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ের সংলাপ হবে। আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করার জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিনি মূলত মুজিববর্ষ উদযাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যৌথ উদ্যাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সফর করছেন।
”ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসেবে যোগ দেবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
সফরের প্রথম দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন।
একই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন মোদী।
সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সকালে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
একই দিনে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করবেন মোদী।
২৭ মার্চ বিকেলে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
মোমেন বলেন, “বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে বলে আমরা আশা করছি। বৈঠকের প্রান্তিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে ২৭ মার্চ রাতেই তিনি দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।