নিউ জিল্যান্ডের
বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ডানেডিনে জীর্ণ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ৪১.৫ ওভারে
বাংলাদেশ অলআউট ১৩১ রানেই।
আগে ব্যাট করে গত
৩ বছরে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর এটি। কিউইদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ২০০৭ সালের
পর সর্বনিম্ন।
ইউনিভার্সিটি ওভালের
উইকেটে বাউন্স ছিল মোটামুটি। নিউ জিল্যান্ডে সেটি কিছটা থাকেই। রোদের দেখা ছিল না বলে
পেসারদের জন্য শুরুতে সহায়তাও কিছুটা ছিল। কিন্তু বিপজ্জনক কিছু নয়। দলকে ডোবায় ব্যাটসম্যানদের
বাজে শট নির্বাচন।
শুরুতে আর শেষে এক
ওভারে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বোলিং নায়ক ট্রেন্ট বোল্ট। ২৭ রানে তার
শিকার ৪ উইকেট।
এই বোল্ট বাংলাদেশকে
ভড়কে দেন ম্যাচের প্রথম বল থেকেই। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম
বলেই বোল্ট করেন দুর্দান্ত আউটসুইঙ্গিং ইয়র্কার। অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম।
বাংলাদেশ অধিনায়ক
পাল্টা জবাব দেন তৃতীয় বলেই, স্ল্যাশ করে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা!
তবে সেই লড়াই জমল
না বেশিক্ষণ জমতে দেননি বোল্ট। বাঁহাতি এই পেসারের অসাধারণ স্কিলের জবাব ছিল না তামিমের।
বোল্টের কয়েকটি আউট
সুইঙ্গার অল্পের জন্য তামিমের ব্যাটের কানা নেয়নি। আউট হওয়া বলটি সুইং করবে ভেবেই খেলেছিলেন
তিনি। কিন্তু সেটি সুইং করেনি, সোজা গিয়ে লাগে প্যাডে। ১৫ বলে ১৩ রানে এলবিডব্লিউ তামিম।
দুই বল পরই বাজে
শটে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার (০)। অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ে নেন নিজের প্রথম ক্যাচ।
বাংলাদেশের বিপদ
তখনই বাড়তে পারত আরও। নিউ জিল্যান্ডে আগেরবারের সফরে ৩ ওয়ানডে মিলিয়ে ৩ রান করা লিটন
কুমার দাস এবার ৩ রানে দেন ক্যাচ। কিপার টম ল্যাথাম ঝাঁপিয়ে বলের নাগাল পাননি, অভিষিক্ত
ড্যারিল মিচেল প্রথম স্লিপে সরাসরি হাতে পেলেও জমাতে পারেননি বল।
লিটন এরপর সময় নিয়ে
থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান একাদশ ওভারে। যখনই মনে হচ্ছিল তিনি
দলকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত, তখনই হতাশাজনক বিদায়। জিমি নিশামের প্রথম ওভারেই শর্ট অব
লেংথ বলে আলতো ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে। ইনিংস শেষ হয় ৩৬ বলে ১৯ রান করে।
মুশফিকুর রহিমের
গল্পও লিটনের মতোই। অস্বস্তিময় শুরুর পর লড়াই, আশা দেখানো ও আলগা শটে বিদায়। নিশামের
বলে কাট করার জায়গা না থাকলেও সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি গালিতে (৪৯ বলে
২৩)।
নিশাম আর সৌভাগ্য
মিলিয়ে ধরা দেয় পরের উইকেট। মাহমুদউল্লাহর জোরালো ড্রাইভে বোলার নিশামের হাত ছুঁয়ে
লাগে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেটে, মোহাম্মদ মিঠুন (২৭ বলে ৯) তখন ক্রিজের বাইরে।
পেসারদের ভূমিকা
শেষে এরপর দৃশ্যপটে মিচেল স্যান্টনার। এই বাঁহাতি স্পিনারের লেগ স্টাম্পের বলে শাফল
করে বোল্ড মেহেদী হাসান মিরাজ।
অভিষিক্ত মেহেদি
হাসান নিজের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেন দ্রুতই। ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন দ্বিতীয়
বলেই ছক্কায়, স্যান্টনারকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ইনসাইড আউট শটে ৯৪ মিটার লম্বা ছক্কায়
আছড়ে ফেলেন মাঠের বাইরে।
তার রোমাঞ্চকর অভিযান
শেষ হতেও সময় খুব লাগেনি। স্যান্টনারকে আরেকবার বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন
মিড অনে।
এরপর খানিকটা লড়াই
করেন কেবল মাহমুদউল্লাহ। বোল্টকে পুল করে বাউন্ডারি আদায় করেন, ক্রিজ থেকে বেরিয়ে ছক্কায়
ওড়ান কাইল জেমিসনকে।
ইনিংসের সর্বোচ্চ
২৭ রান করে তার বিদায় আগ্রাসী শট খেলেই। ম্যাট হেনরির বলে পুল করেছিলেন, শর্ট মিড উইকেটে
লাফিয়ে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন স্যান্টনার।
এরপর ইনিংস শেষ করতে
আর বেশি সময় নেননি বোল্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪১.৫ ওভারে ১৩১ (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩,
মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১০, হাসান ১, মুস্তাফিজ ১*;
বোল্ট ৮.৫-০-২৭-৪, হেনরি ৯-১-২৬-১, জেমিসন ৮-১-২৫-০, নিশাম ৮-১-২৭-২, স্যান্টনার ৮-০-২৩-২)।