উজ্জ্বল ঘোষের ফেইসবুক ছবিসহ এক পোস্টকে ঘিরেই এ পুলিশ দম্পতি আলোচনায় উঠে এসেছেন।
উজ্জ্বল ঘোষ কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং স্ত্রী ঊর্মি দেব রেলওয়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আইনজীবীর মেয়ে ঊর্মি দেব ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সদস্য। চট্টগ্রাম মহানগরের চাঁন্দগা এলাকা নিবাসী ঊর্মি দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। আর ফরিদপুর জেলা সদর নিবাসী পরিবহন ব্যবসায়ীর ছেলে উজ্জ্বল তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।
গত ১৭ মার্চ রেলওয়ে পুলিশের আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ঊর্মি দেবের পাশে দাঁড়িয়ে তার কার্যালয়ে তোলা একটি ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন উজ্জ্বল ঘোষ।
ছবির সাথে তিনি লেখেন, “পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে, তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা ওপরে।
“না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমার ও আমার সহধর্মিণীর অবস্থানের এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।”
তিনি আরও লেখেন, “যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না, আমার তখন খুব হাসি পায়। মায়ের জাত নিয়ে কী আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে।”
তবে তার এই পোস্ট ব্যাপক সাড়া ফেলার পর জানতে চাইলে উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “আমি একটা ছবি আপলোড করেছি, মানুষ এটাকে যার যার মতো করে ভাইরাল করছে। আমার এই জনপ্রিয়তা দরকার নেই, আমার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দরকার।
“আমি চাকরিজীবী, আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। আমি যদি পাবলিক ফিগার হতাম, তাহলে আমার ব্যাপারে সবকিছু জানার অধিকার থাকত কিন্তু আমি তো পাবলিক ফিগার না। আমি সামান্য একজন চাকরিজীবী।”
এ প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার ঊর্মি দেব সাংবাদিকদের জানান, ২০১৯ সালে পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণে গিয়ে উজ্জ্বলের সাথে তার প্রথম পরিচয় হয়।
“ওদের প্রশিক্ষণ তখন শেষ পর্যায়ে ছিল। সেখানে ফেইসবুকেই আমাদের পরিচয় হয়। এরপর মাঝে-মধ্যে কথা বলতাম। সেই থেকে আমাদের মধ্যে ভালো লাগা তৈরি হয়।
“আমরা যাওয়ার তিন-চার মাস পরেই ওরা প্রশিক্ষণ শেষ করে বের হয়ে যায়। এরপর মাঝে-মধ্যে কথাবার্তা হতো। আমরা দুজন দুজনের পরিবারে আমাদের বিষয়টি জানাই। পরে পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়।”
এএসপি ঊর্মি আরও বলেন, “সব মা-বাবাই চায় মেয়ের চেয়ে ওপরে অথবা সমপর্যায়ের কারো সাথে বিয়ে দিতে। আমার পরিবারও চাইতো অন্তত আমার সমপর্যায়ের কাউকে যেন বিয়ে করি। কিন্তু উজ্জল পদে আমার জুনিয়র হলেও আমার পরিবার আমাকে বাধা দেয়নি।
এটাতে তার কোনো মহত্ব দেখানোর ব্যাপার নাই জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি একজন ভালো মানুষ পাওয়া খুব জরুরি। আমি চাইলেই ক্যাডার সার্ভিসের অথবা অন্য বড় কাউকে চাইতে পারতাম কিন্তু ভালো মানুষ তো সবখানে পাব না।
“আমি উজ্জ্বলের মতো একজন ভালো মানুষ পেয়েছি।”