জাপান থেকে ভারতের রূপালি পর্দায় কেইকো’র পদার্পণের গল্প শোনাচ্ছেন আরাফাত শান্ত।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বলিউডে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ছবিতে ৯২ ভাগ কাজ করছেন পুরুষ। আট ভাগে খালি নারীর অংশগ্রহণ। প্রধান চিত্রগ্রাহকের কাজে নারীর সংখ্যা আঙ্গুলে গুনে বলা যাবে। তাদের মধ্যে একজন হলেন কেইকো।
কেইকো কেনো আলাদা? কারণ তিনি ভারতীয় নন। তিনি জাপানী বংশোদ্ভূত আমেরিকায় বড় হওয়া একজন নারী। দক্ষিণ জাপানের এক প্রত্যন্ত এলাকায় তার বাবা মায়ের আবাস।
জাপানি ভাষায় ডাবিং করা ইংরেজি সিনেমা আর টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে তার মনে হত সে এসবই করবে বড় হয়ে। সুযোগ মিলে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগো’র ‘স্কুল অফ থিয়েটার, টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম’ থেকে গ্রাজুয়েট হলেন। লস অ্যাঞ্জেলেস এবং জাপানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করতেন।
এক ফরাসি চিত্রগ্রাহক বন্ধু তাকে ভারতের একটা প্রজেক্টে কাজ করার প্রস্তাব দেন। অনিচ্ছা থাকার পরেও ভারতে এসে কাজটা করেন। ভাগ্যিস তিনি অনিচ্ছা নিয়ে এসেছিলেন। নয়তো ভারতের সিনেমার প্রেমে পড়তেন কীভাবে?
ভারতের চলচ্চিত্রের যে পাগলামি, তাতে তিনি বুঁদ হয়ে গেলেন। অন্য দেশের মানুষ, ভাষা গত ঝামেলা, নারী হিসাবে প্রতিবন্ধকতা সব পাশ কাটিয়ে তিনি ‘ম্যারি কম’ ছবির প্রধান চিত্রগ্রাহকের কাজ পান।
এরপর আর সমস্যা হয়নি। ‘নুর’, ‘তানহাজি’, ‘শকুন্তলা দেবী’, ‘টোটাল ধামাল’ ছবির মতো সব বড় ও ব্যবসা সফল ছবিতে চিত্রগ্রাহকের কাজ করেছেন।
যে সাহসটা পুরুষ সিনেমোটোগ্রাফারও করেন না, তিনি কাঁধে ক্যামেরা নিয়েও লম্বা লম্বা শট নেন। বিপুল শ্রমসাধ্য সব কাজ একাই করেন। নতুন যারা বলিউডে এই লাইনে আসছে অনেকের অনুপ্রেরণা তিনি।
পুরো বাইরের একটা মানুষ হয়ে তিনি কাজ করেই যাচ্ছেন, জাপানে না ফিরে ভারতেই থাকছেন। কারণ তার কাজ করতে ভালো লাগে।
তারপরও তিনি নিজ দেশে কেনো ফিরে গেলেন না?
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে জনগনের পাগলামি আমাকে এখানে থেকে যেতে দেয়নি। একবার কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে একটা দৃশ্য ধারণ করছিলাম। আমাদের চারপাশে প্রায় ৩শ’র মতো মানুষ আনন্দ-উল্লাস করছিল।”
বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিজ কিংবা মিউজিক ভিডিও’র কাজেও তাকে দেখা যায়। কোনো মাধ্যমকেই তিনি অবহেলা করেন না।
বলেন “আমার কাজ হলো পরিচালকের যে ভিশন সেই মাফিক কাজ করা।”
তারপরও বাবা-মাকে নিজের সম্পর্কে কোনো কিছু জানাতে পারেননি। অবসর প্রাপ্ত সামরিক অফিসার হিসেবে কেইকো’র বাবা খুবই কঠোর আর প্রাচীনপন্থি।
তার কথায়, “জাপানে এখনও সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে পুরুষদের অগ্রাধিকার বেশি। নারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে সেখানে কাজ করা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যেত। যদিও এখন পরিবর্তন হচ্ছে।”
জাপানের চলচ্চিত্র জগতে এখন পর্যন্ত কাজ না করা এই জাপানি নারী চিত্রগ্রাহকের বাবা-মাকে তার আসল কাজ সম্পর্কে জানানোর সুযোগ হয়েছিল দেশ ছেড়ে আসার ১০ বছর পর।
জাপানের প্রযোজিত আমেরিকান চলচ্চিত্র ‘সামুরাই অ্যাভেঞ্জারস’য়ে কাজ করেছিলেন কেইকো। সেটা জাপানি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে কেইকো তার বাবা-মা’কে সেটা দেখতে যেতে বলেননি।
কারণ হিসেবে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “তারা এখনও জানে না আমি চলচ্চিত্রে ঠিক কী কাজ করি। যদিও জানে আমি ভারতের ছবিতে কাজ করি। তবে তারা এখনও বিশ্বাস করে আমি দেশ ছেড়েছিলাম ভাষাতত্ত্বে পড়াশুনার জন্য।”