বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ু দূষণের এই
সমীক্ষা চালিয়েছে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই গবেষণা ফলাফল তুলে ধরেন বাপার যুগ্ম
সম্পাদক ও ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আশেপাশের এলাকায় দূষণ সবচেয়ে বেশি বলে সমীক্ষায়
উঠে এসেছে। আবাসিক এলাকা ধানমণ্ডি, গুলশান, বাড্ডা ও বনানীতে দূষণের মাত্রা বেড়েছে
‘আশঙ্কাজনকভাবে’।
ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে ২০২০ সালে ঢাকা শহরের
৭০টি স্থানের গড় বস্তুকণা২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪ মাইক্রোগ্রাম। ভূমি ব্যবহারের
উপর ভিত্তি করে ২০২০ সালে ৫টি এলাকার বস্তুকণা২.৫ গড় মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪
মাইক্রোগ্রাম যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০.২ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালে
বস্তুকণা২.৫ গড় মান পাওয়া যায় প্রতি ঘনমিটারে ৩০৪.৩২ মাইক্রোগ্রাম।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা২.৫ এর পরিমাণ
তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অর্থাৎ যানবাহন, শিল্পকারখানা
ও বর্জ্য পোড়ানো থেকে সৃষ্টি হয়। তবে নির্মাণকাজ হতে সৃষ্ট ধুলাবালি রাস্তার গাড়ির
চাকার সাথে সংঘর্ষের ফলে অতিক্ষুদ্র ধূলিকণায় রূপান্তরিত হতে পারে ।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালেও ভূমি ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে
ডিসেম্বর মাসে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষেণের লক্ষ্যে বায়ুতে বস্তুকণা২.৫
এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে।
এ গবেষণার অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের ১০টি সংবেদনশীল, ২০টি আবাসিক, ১৫টি বাণিজ্যিক,
২০টি মিশ্র এবং ৫টি শিল্প এলাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাপ করা হয়
প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পিপিএম-পার্টস পার মিলিয়ন) এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ মাইক্রোমিটার
ও ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণিতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করেন
গবেষকরা।
>> বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে
২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে,
তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়।
>> এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে
বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
>> আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে
বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত
অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।
এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ন্যায় ২০২০
সালেও পুরানো ঢাকার আশেপাশের এলাকা যেমন লালবাগ, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, কামরাঙ্গীরচর
ও সূত্রাপুরে দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে রামপুরা ও তেজগাঁও
শিল্প এলাকাও ২০১৯ সালের ন্যায় ২০২০ সালে অতিমাত্রার দূষিত ছিল।
২০২০ সালে আবাসিক এলাকাগুলো যেমন- ধানমণ্ডি, গুলশান, বাড্ডা ও বনানীতে
দূষণের মাত্রা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে যেখানে ২০১৯ সালে দূষণের মাত্রা অনেকাংশে কম ছিল।
২০২০ সালে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কিছু এলাকা যেমন- মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী ও
ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দূষণের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল।
বায়ু দূষণ রোধে কিছু স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ এর
ঘোষণা দেন অধ্যাপক মজুমদার।
স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা
এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি
ছিটানোর ব্যবস্থা করার উপর জোর দেন তিনি।
এছাড়াও নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখা ও নির্মাণ সামগ্রী
পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়াসহ বায়ু দূষণ রোধে তিনি সিটি গভর্নেন্স এর প্রচলন করতে বলেন
তিনি ।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর মাননীয়
উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ
সম্পাদক শরীফ জামিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী,
বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, মিহির বিশ্বাস এবং বাপা’র বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টি
দূষণ কমিটির সহ-আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মোল্ল বক্তব্য দেন।