রোববার নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী তরুণ উদ্যোগের আয়োজনে
সমাবেশ থেকে এ দাবি ওঠে।
সমাবেশ থেকে শাল্লাসহ দেশের সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত
করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করা হয়।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশা, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং
পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ সমাবেশে চট্টগ্রামে অংশ নেন।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ
ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও আমাদের মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে
আমরা অংশ নিয়েছিলাম জাতি ধর্ম বর্ণ এবং নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে। সেই লড়াইয়ের ফসল বাংলাদেশ।
“বঙ্গবন্ধু এমন একটি সংবিধান করেছিলেন যাতে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি হওয়ার
কথা ছিল না। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি বলতে হয় ধর্মের কথা। বাংলাদেশ চিরকাল সাম্প্রদায়িকতার
বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অসাম্প্রদায়িক উত্তরাধিকার বহন করে বাংলাদেশের জন্ম। খোদ সরকারি
দলের সাধারণ সম্পাদক যাদের হাইব্রিড বলছেন তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই যে
বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন সে দেশ আমরা পাব। আত্মপরিচয়ের জন্য হাজার বছরের
ঐতিহ্য রক্ষায় যে যুদ্ধ আমরা করেছিলাম তা যেন হারিয়ে না যায়।”
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, “একাত্তরে
আমরা মৃত্যুর পরোয়া না করে যুদ্ধ করেছি। চার বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
সাক্ষ্যও দিতে হয়েছে। যে বাঘা যতীনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন
দেখেছিলেন সেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য কে ভাঙল?
“দিরাই শাল্লা নাসিরনগরে কারা হামলা করল? তারা কারা? কেন এসব হামলায় সরকারি
দলের লোকের নাম আসে? শাল্লার ঘটনায় দেড় হাজার লোককে কেন আসামি করা হলো? এতে প্রকৃত
অপরাধীরা তো পার পেয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। যতক্ষণ দেশকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করা না
যাবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চালাতে হবে।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা
বলেন, “আজ যাদের হাতে রাষ্ট্র তাদের আশ্রয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। রাজনীতির সাথে সাম্প্রদায়িকতা
মিশলে এমন ঘটনা ঘটে। যারা রাষ্ট্র চালাবেন তাদের জাতীয় চার মূলনীতির প্রতি আস্থা থাকতে
হবে। ক্ষমতায় থাকতে যাকে তাকে কোলে তুলে নিলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ থাকবে না।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “সারাদেশে একটি আন্দোলনই করা
উচিত- সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা। প্রশাসন
এত শক্তিশালী তারা কেন এসব সহিংসতা থামাতে পারছে না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যারা আপনাদের
দলে ঢুকেছে তাদের চিহ্নিত করে বহিস্কার করুন।
“বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক একজন বাঙালি ছিলেন। আমরা কিন্তু বাঙালি হতে পারছি
না। হাজার বছরের ঐতিহ্য যে নিয়ে যে বাংলাদেশ গড়েছিলাম সেখান থেকে আমরাও সরে যাচ্ছি।
ডিজিটাল আইনে বিভ্রান্তিকর ওয়াজকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু
এসব শব্দ ব্যবহারের জন্য নয়। যখন মামুনুল হক বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভেঙে দেবে বলার পরও
সারাদেশে ওয়াজ করে বেড়াচ্ছে। নারী বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক ওয়াজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে
৫৭ ধারা নেই। এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি।
“আমাদের আবার লড়াই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দয়া করে নিজের দলের দিকে তাকান।
সাম্প্রদায়িক লোকে দল ভরে গেছে। ৫৭ ধারার মামলার বাদি কারা? দলের তদন্ত করে দেখেন।
না হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ধারায় দেশ থাকবে না। বাংলাদেশ নামের সাম্প্রদায়িক দেশ হলে
মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন অর্থহীন হয়ে যাবে।”
কবি সাংবাদিক ওমর কায়সার বলেন, “যখন সারাদেশে ঘটা করে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী
পালন করছে তখন সমাজটা একাত্তরের পরাজিত শক্তির দখলে। সরকার হয়ত প্রগতিশীল শক্তি পরিচালনা
করছে। এজন্যই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শাল্লার মত ঘটনা ঘটছে। আমাকে আমার মত করে
পেতে হবে আমার সমাজকে। আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সমাজ একাত্তরের
পরাজিত শত্রুদের দখলে “
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সোহেলের সঞ্চালনায়
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী নূরজাহান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খেলাঘর সংগঠক অমল
কান্তি নাথ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. বেণু কুমার
দে, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সহ- সভাপতি কবি আশীষ সেন,উদীচী চট্টগ্রামের সংগঠক
অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তা, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত
বড়ুয়া, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আহমেদ মুনির, চবি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল, বাংলাদেশ
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রামের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু, সারওয়ার আলম
মনি।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক আলীউর
রহমান, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, আবৃতি শিল্পী ও সাংবাদিক অনুপম শীল, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম
জেলার সভাপতি এ্যানি সেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মাহমুদুল করিম, মহসীন কলেজ
ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন।
উপস্থিত ছিলেন ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, খেলাঘর সংগঠক মোরশেদুল আলম চৌধুরী,
ছড়াকার গোফরান উদ্দিন টিটু, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি
রাশেদ হাসান, বোধন এর সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের
যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল দাশ প্রিন্স, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাজ্জাদ হোসেন জাফর, চকবাজার
থানা ছাত্রলীগ নেতা রাজীব কান্তি নাথ, যুবলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন, শিবু প্রসাদ চৌধুরী
ও আমিনুল ইসলাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।