ক্যাটাগরি

সেই এফআর টাওয়ার এখন ভূতুড়ে ভবন

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ
রোদ্রৌজ্জ্বল দিনের দুপুরেই কিছুক্ষণ পরই ঘটে ছন্দপতন। ভবনের একটি ফ্লোরে আগুন লেগে
মুহূর্তেই ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে এবং বাঁচার চেষ্টায় ভবন
থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান ২৭ জন।

এরপর এক বছর পার হলেও
আর প্রাণ ফেরেনি বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২৩তলা ভবনে। ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে
২৩ তলা পর্যন্ত করা হয়েছিল ভবনটি। ভবনে ছিল না পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

অনিয়ম আর অবহেলার অভিযোগে
মামলা হয়েছে ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন তারা।

অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনটি
পরিদর্শন করে রাজউকের বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছিল, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ভবনটি ব্যবহার
করা সম্ভব।

ভবন ব্যবহারের অনুমতি
চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে মালিকপক্ষ। তবে মামলা নিষ্পত্তি না
হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই ভবন পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

গত বছর এই দিনে বহুতল এই ভবনে আগুনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৭ জন।

গত বছর এই দিনে বহুতল এই ভবনে আগুনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৭ জন।

এফআর টাওয়ারে গিয়ে
দেখা গেছে, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ প্রান্তে ভবনের প্রধান ফটকটি বন্ধ। পেছনে বেইজমেন্ট
ও আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ে যাওয়ার পথটি খোলা রয়েছে। তবে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি আটকে
দেওয়া হয়েছে। সেখানে টুল নিয়ে বসে আছেন একজন নিরাপত্তাকর্মী।

রেজোয়ান মণ্ডল নামে
এই নিরাপত্তাকর্মী জানান, এফআর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটি নিয়োগ দিয়েছে তাকে। তিনি এখানে
কাজ করছেন চার-পাঁচ বছর ধরে। অগ্নিকাণ্ডের দিন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আগুন লাগার খবর
শুনে পরে ঢাকায় ফেরেন।

রেজোয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে জানান, এখন তিনিসহ আরও একজন ভবন দেখাশোনা করছেন। রাতে ভবনের ভূগর্ভস্থ গাড়ি
পার্কিংয়ের জায়গায় ঘুমানোর জায়গা করে নিয়েছেন। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ভবনটিতে ভূতুড়ে
পরিবেশ তৈরি হয়।

“রাইতে কলাপসিবল গেইট
আটকায়া দিয়া শুইয়া থাকি। খুব নীরব থাকে। একটা বিড়াল গেলেও ভয় লাগে। আর এতগুলা মানুষ
মারা গেছে,” বলেন তিনি।

এফ আর টাওয়ারের জমির
মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ
করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার।

জমির মালিক ৪৫ শতাংশ
এবং রূপায়ন গ্রুপ ৫৫ শতাংশ ফ্লোর স্পেসের মালিক। রূপায়নের অংশ কিনেছেন আরও ২২ জন।

সেই মালিকদের একজন
মো. মনিরুজ্জামান, তিনি ফ্ল্যাট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকও।

মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মালিকদের অনেকের আয়ের প্রধান উৎস ভবনের ভাড়া। ভবন ব্যবহার
করতে না পারায় সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার তিনি জানান,
ভবনটি আবার চালু করতে চেষ্টা করছেন তারা। ভবনের ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভে করতে বুয়েটের
সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে।

“আমরা জানি না আসলে
ভবনটি কী অবস্থায় আছে। ভবনটি ভালো করে পরীক্ষা না করে সেখানে উঠতে সবাই ভয় পাচ্ছে।”

ভবনটি ব্যবহার করতে
আইনি কোনো বাধা নেই দাবি করে মনিরুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার পর ভবনটি পুলিশের জিম্মায়
ছিল। পরে তাদের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।

“ভবনটি চালু করা যাবে
না এমনটি আমাদের কেউ বলেনি। ড্রয়িং না মেনে ভবন বানানো এবং অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ভবনের
উপরে আরও পাঁচটি ফ্লোর নির্মাণের জন্য দুটি মামলা আছে। সেটার জন্য তো আমরা দায়ী নই,
এটা ডেভেলপারের বিষয়। আমরা তো কিনেছি ডেভেলপারের কাছ থেকে। তাদের অন্যায়ের দায় তো আমাদের
ওপর আসতে পারে না।”

আগুন লাগার পর ভবনটি
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন বুয়েটের একদল বিশেষজ্ঞ। তাদের একজন অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ
আনসারী জানান, তাদের পরীক্ষায় ভবনের সাত ও আট তলায় অনেকগুলো ফাটল ধরা পড়েছিল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, ভবনটি ১৪ তলা থেকে ১৮ তলা, পরে ২২ তলা করেছে।

“তখন আমরা বলেছিলাম,
ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করতে। অ্যাসেসমেন্টে যদি দেখা যায় যে, রেট্রোফিট
করলে ভবনটি ব্যবহার করা যাবে তাহলে তা করতে। তো ওইটা যদি হয় তাহলে ভবনটি টিকে যাবে।
অথবা যেটা করতে পারে ফাউন্ডেশনটা আরও একটু স্ট্রং করতে হবে। সেটা করা সম্ভব। নিচের
মাটিটা ইমপ্রুভ করা যায়।”

তবে মামলা নিষ্পত্তি
না হলে ভবন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের
সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “যেহেতু আদালতে মামলা মোকাদ্দমা চলছে। ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি চালুর
কোনো অনুমোদন দেওয়া হবে না।”