ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শটগানসহ দুটি
অস্ত্রও হান্নানের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা
বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণখান) হাফিজুর রহমান রিয়েল জানিয়েছেন।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস)
আফতাব উদ্দিন জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে আইনুশবাগ চাঁদনগর এলাকায় ওই
হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হান্নান ও তার ছেলেসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
তবে হান্নানের (৫৬) কাছ থেকে যে শটগান
ও রিভলবার উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলোর লাইসেন্স ছিল কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে
নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত উপ কমিশনার হাফিজুর রহমান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হান্নানের বিরুদ্ধে বালু চুরির অভিযোগ এনে
স্থানীয় কয়েকজন সকালে তার বাসার সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন। বাগবিতণ্ডার মধ্যে
হান্নান শটগান দিয়ে গুলি করলে আব্দুর রশিদ মারা যান।”
দক্ষিণখান
জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার গোস্বামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
৪০ বছর বয়সী রশিদ ওই এলাকায় একটি বাড়ি ও মার্কেটের মালিক। মাঝে মধ্যে জমি কেনা-বেচা
বা রড সিমেন্টের ব্যবসাও তিনি করতেন।
আর যার গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন, সেই
হান্নান ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন।
ফেইসবুকে হান্নান নিজেকে
বাংলাদেশ-জাপান মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব, জাপান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং
প্রাইড জাপান বাংলাদেশ নামের এক কোম্পানির এমডি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার বাড়ির
নাম জাপানি কটেজ।
বিপ্লব কুমার
গোস্বামী বলেন, জাপানি কটেজের কাছে রশিদের এক আত্মীয় বাড়ি করছেন। নির্মাণাধীন বাড়ির
কিছু বালি সামনে খোলা জায়গায় রাখা ছিল। কিছুদিন আগে সেই বালি চুরি গেলে অভিযোগের আঙুল
ওঠে হান্নানের দিকে।
“বুধবার সকালে
তারা হান্নানের বাসায় গিয়ে প্রতিবাদ করলে হান্নান তাদের ভয় দেখান এবং মারধর করে তাড়িয়ে
দেন। পরে রশিদসহ কয়েকজন হান্নানের বাসায় গেলে হান্নান শটগান নিয়ে বাসা থেকে বের হন
এবং বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসময় তার সাথে এবং এলাকার কিছু সমর্থক তার সঙ্গে ছিলেন।
“রশিদের সাথে
বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হান্নান গুলি করেন। একটি গুলি রশিদের মুখে লাগে। তাতে ঘটনাস্থলেই
তার মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।”
এরপর বিক্ষুব্ধ
লোকজন হান্নানের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং বাসার সামনে থাকা তার গাড়িতে আগুন
লাগিয়ে দেয়।
ঘটনার পরপরই
সঙ্গীদের নিয়ে হান্নান নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে এবং তার ছেলেসহ
সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব।
তিনি বলেন,
হান্নানের বাড়ি চাঁদপুরে। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি দক্ষিণ খানে বাড়ি করে থাকছেন।
তার আগে ১৩/১৪ বছর জাপানে ছিলেন বলে এলাকার মানুষ তাকে ‘জাপানি হান্নান’ বলে ডাকে।
“প্রকৃত অর্থে তার কেনো ব্যবস্যা নেই। সবাই জানে তিনি বিমানবন্দরে ব্যবসা করেন। কিন্তু
কী ব্যবসা করেন, কেউ বলতে পারে না। তবে কেউ কেউ বলছেন, মাটি-বালু ভরাটের কিছু কাজ করে
থাকেন হান্নান।”
তার রাজনৈতিক
পরিচয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, “প্রাথমিকভাবে
জানা গেছে যখন যে সরকার আসে, তার পক্ষে তিনি কাজ করার চেষ্টা করেন এবং পরে সেই দলের
লোক পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। তার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানার
চেষ্টা করছি আমরা।”