বৃহস্পতিবার
রাত ১২টা ১ মিনিটে ভার্চুয়াল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল
ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজ।
একাত্তরের
গণহত্যার ৫০তম বছরের এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ২৫ মার্চের প্রথম প্রহরে
সামিল হন অসংখ্য মানুষ।
প্রদীপ
প্রজ্জ্বলন করে ফেইসবুকে ভিডিও বা স্থিরচিত্র প্রদানের পাশাপাশি #recognise1971genocide
এবং #RecogniseBangladeshGenocide হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিভিন্ন বার্তা তুলে ধরেছেন
অনেকে।
বাঙালির
মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের
ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের
প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
২৬ মার্চ
প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।
নয় মাসের
যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ
ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
সেই বাংলাদেশ
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পৌঁছাচ্ছে, আর তার আগের দিন পূর্ণ হচ্ছে
২৫ মার্চের সেই কালরাতের ৫০ বছর।
পাকিস্তান
বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মরণ করে প্রদীপ জ্বালিয়ে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার
সুমিত ব্যানার্জী ফেইসবুকে লিখেছেন, “একাত্তরের
২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতায়
এক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।”
ফেইসবুকে
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে ব্যাংক কর্মকর্তা রাফি শামস লিখেছেন, “সমগ্র বিশ্বের বাঙালিরা যার যার অবস্থান থেকে ২৫ মার্চ প্রথম
প্রহরে, রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি/প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হয়ে
এই দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করছে। আমিও আমার পরিবারসহ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হলাম, সংহতি
জানালাম।”
ভয়াল সেই রাতের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যুক্তি তুলে তিনি আরও লিখেছেন,
“২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দান একদিকে যেমন আমাদের উপর
সংগঠিত বর্বরতাকে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করবে, সেই সাথে বেগবান হবে আন্তর্জাতিক
প্লাটফর্মে আমাদের ন্যায়বিচারের সুযোগ।
“১৯৭১ এ আমাদের উপর যে গণহত্যা হয়েছে সেই বিচারের দাবি করে যেতে হবে
শেষ মুহূর্ত অবধি। দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করতে পেরেছি, এবার সময় যুদ্ধাপরাধের
জন্য পাকিস্তানের বিচারের দাবি জোরদার করা। তবেই এই লড়াই পূর্ণতা পাবে।”
ফারহান রাকিব ইমন নামের আরেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী
লিখেছেন, “স্বীকৃতি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই দাবি চলবে।”
ক্যানভাস প্রোডাকশন হাউজের প্রতিষ্ঠাতা রাফিদুল ইসলাম
রাফিদ ফেইসবুকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, “শিল্পী মনসুর উল করিম ও সেতারে রবিশংকর যুগলের মাধ্যমে ২৫ মার্চ কালরাত্রির
নৃশংসতা স্মরণ করলাম এবং একাত্তরের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি দাবি করছি।”
প্রদীপ
প্রজ্জ্বলনের পাশাপাশি দিনটি স্মরণে ২৫ মার্চ আইসিএসএফ এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি
সমাজ মুক্ত আলোচনার আয়োজনও করেছে।
‘১৯৭১
এর গণহত্যার স্মরণ, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জনে কর্মসূচি নির্ধারণ’
শীর্ষক আলোচনাটি ঢাকার সময় বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া
ক্যানবেরা, সিডনি, মেলবোর্ন সময় রাত ৯টা, ব্রিসবেন সময় রাত ৮টা ও লন্ডন সময় সকাল ১০টায়
শুরু হবে।
পররাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংসদে গণহত্যা দিবসের প্রস্তাবক সংসদ সদস্য শিরিন আখতার,
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. নমিতা হালদার, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের
রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান, এমিরেটাস অধ্যাপক (ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. রফিকুল
ইসলাম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, আইসিএসএফ ট্রাস্টি ড.
আহমেদ জিয়াউদ্দিন ও রায়হান রশিদ আলোচনায় অংশ নেবেন।
অনুষ্ঠানসূচিতে
রয়েছে- শুভেচ্ছা বক্তব্য, গণহত্যার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা, মোমবাতি/প্রদীপ প্রজ্জ্বলন,
তথ্যচিত্র ‘Creed for Justice’ প্রদর্শন, আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে ‘গণহত্যার বৈশ্বিক
স্বীকৃতি’ প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন, নির্ধারিত প্যানেল বক্তাদের বক্তব্য
উপস্থাপন, মন্তব্য ও প্রশ্নোত্তর পর্ব।
সমাপনী
বক্তব্য দেবেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ফ্যাকাল্টি সদস্য ড. মোহাম্মদ
আলাউদ্দিন।
সঞ্চালনায়
থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান
ও কলামিস্ট ড. এজাজ মামুন।
ফেইসবুকে
এ আলোচনায় মতামত দেওয়া এবং প্রশ্ন করার সুযোগ সবার জন্য উম্মুক্ত থাকছে।