জাপানি জাহাজ কোম্পানি শোয়ে কিসেন কাইশা লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ইয়ুকিতো হিগাকি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালের তীর ও তলা থেকে বালু সরাতে ১০টি টাগবোট কাজে লাগানো হয়েছে এবং শনিবার টোকিওর স্থানীয় সময় রাতের মধ্যে জাহাজটিকে আবার জলে ভাসানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
২৩ মার্চ সকালে কন্টেইনারবাহী জাহাজ এভার গিভেন সুয়েজ খালে আটকা পড়ে যাওয়ার পর এই প্রথম জাহাজটিকে ফের কবে আবার জলে ভাসানো যাবে সে বিষয়ে একটি সময়সীমা উল্লেখ করা হল।
জাহাজ আটকে সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে গত পাঁচ দিন ধরে বহু মালবাহী জাহাজকে তাদের মূল রুট থেকে সরিয়ে বিকল্প পথে আফ্রিকা ঘুরে গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে। বিকল্প পথে জাহাজ পাঠানোর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে থাকায় এর প্রবেশ মুখে লোহিত সাগরে ২০০টিরও বেশি জাহাজ অপেক্ষা করছে, এতে সেখানে বড় ধরনের জাহাজজট তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার মিশরের স্থানীয় সময় সকালে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুই লাখ ২০ হাজার টনি জাহাজটি প্রবল বাতাস ও ধূলি ঝড়ের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে গিয়ে সুয়েজ খালের দক্ষিণাংশের সংকীর্ণ একক লেনে আড়াআড়িভাবে আটকে যায়, এতে গুরুত্বপূর্ণ জলপথটিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জাপানের আসাহি শিমবুন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টোকিওর স্থানীয় সময় শনিবার রাতের মধ্যে জাহাজটিকে এর অবস্থান থেকে সরানো যাবে বলে ক্রু-রা আশা করছেন বলে হিগাকি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জাহাজটির রাডার ও প্রপেলারে কোনো সমস্যা নেই। ফের জলে ভাসানো গেলে এটি আবার চলতে শুরু করবে।”
একইদিন এর আগে এভার গিভেন জাহাজের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপক কোম্পানি বানহার্ড শেল্টি শিপম্যানেজমেন্ট (বিএসএম) জানিয়েছে, জাহাজটিকে জলে ভাসানোর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
তারা জানিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার ঘন মিটার বালু সরাতে সক্ষম একটি সাকশন ড্রেজার বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে, বিভিন্ন উপকরণের পাশাপাশি মার্কিন নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞদের একটি দলও পাঠাতে চেয়েছে তারা।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি জানিয়েছেন, সুয়েজ খাল খুলতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এ কারণে তারা ‘পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’।
সুয়েজ খালে জাহাজজটে আটকা পড়া যুক্তরাষ্ট্রের কনন্টেইনারবাহী জাহাজ মের্স্ক ওহায়ওর প্রধান প্রকৌশলী জো রেনল্ডস শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, খালটির দক্ষিণের প্রবেশমুখে অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা ‘দ্রুত বাড়ছে’।

“এটি বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলের সময়সূচীতে প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে,” সতর্ক করে বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার মিশরের স্থানীয় সময় সকালে পানামায় রেজিস্ট্রিকৃত ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুই লাখ ২০ হাজার টনি জাহাজটি প্রবল বাতাস ও ধূলি ঝড়ের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে গিয়ে সুয়েজ খালের দক্ষিণাংশের সংকীর্ণ একক লেনে আড়াআড়িভাবে আটকে যায়, এতে গুরুত্বপূর্ণ জলপথটিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পানামায় রেজিস্ট্রিকৃত এভার গিভেন চীন থেকে মালবাহী কন্টেইনার নিয়ে নেদারল্যান্ডের বন্দর শহর রোটেরডামে যাচ্ছিল।
এই জাহাজটিকে মুক্ত করার কাজ করছে নেদারল্যান্ডসের বোসকালিস কোম্পানি। এ কাজ করতে কতো সময় লাগবে তা বলার সময় হয়নি বলে এর আগে জানিয়েছিলেন বোসকালিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিটার বেরদোওস্কি।
মিশরের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তিনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি জাহাজটির কন্টেইনার সরিয়ে এটিকে মুক্ত করতে হয় তাহলে কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
ভূমধ্যসগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করা ১৯৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ খালটি দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ পণ্য পারাপার হয়। এই খালটির কারণেই এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম জলপথ উন্মুক্ত হয়েছে।
এর বিকল্প পথ আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে যাওয়া, তাতে সুয়েজ খালের চেয়ে আরও দুই সপ্তাহ বেশি সময় লাগে।