শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে নামাজের পর সংঘবদ্ধ এক দল লোক ভাঙ্গা থানার ফটক ও থানার ভেতরে দুটি মোটরসাইকেলসহ ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোপালগঞ্জে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ফেরার পথে বিঘ্ন ঘটনাতে’ এ হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য।
আহতরা হলেন ভাঙ্গা থানার এসআই মো. শহীদুল্লাহ (৪৭), আবুল কালাম আজাদ (৩৫), এএসআই আজিজুল রহমান (৩৩), কনস্টেবল জয়নাল আবেদিন (৩৫), শাহ জালাল (২৭) এবং মতিউর রহমান (৪৩)। তাদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুদিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদী। সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে যান। এরপর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়েতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়।
ভাঙ্গা থানার এ হামলাকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে ফরদিপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, “আমরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় আগে থেকেই যোগাযোগ করেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিলেন-কোনো ঝামেলা করবে না। কিন্তু কথার বরখেলাপ করে অতর্কিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।”
পুলিশ সুপার বলেন, “ভাঙ্গা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জ সফরের পর ভিআইপিরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ে দিয়েই ঢাকা ফিরবেন।
“সেটি পণ্ড করার জন্যই এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।”
এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মামলার পর আমরা হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারব।”
ঘটনার বিবরণ দিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে নামাজের পর ভাঙ্গা থানার কাছে জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ঈদগাঁ মাদ্রসা থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলটি ভাঙ্গা বাজার ঘুরে বিশ্ব রোড এলাকায় যায়। পরে বিশ্বরোড থেকে ফিরে মিছিলটি ভাঙ্গা থানার কাছে ঈদগাঁ মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হয়।
মিছিলকারীরা ওই মাঠ থেকে লাঠি ও কাঠের বাটাম সংগ্রহ করে দুপুর সোয়া ২টার দিকে অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ জন অতর্কিতে ভাঙ্গা থানায় হামলা করে।
হামলাকারীরা ভাঙ্গার থানার গেইট ভাংচুর করে। থানার ভেতরে ঢুকে দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এ সময় হামলাকারীরা থানার দিকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইটের টুকরো ছুড়তে থাকে।
পরে ব্যারাক থেকে পুলিশ এসে শর্টগানের ৪৫টি গুলি ছুড়ে ৪০ মিনিট পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে দুপুর থেকে ফরিদপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঝিনাইদহ মহেশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবি’র নায়েক সুবেদার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে দুই প্লাটুনে ৪০ জন বিজিবি সদস্য ফরিদপুরে এসে পৌঁছান। ফরিদপুরে এসেই তারা ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বলে জানানো হয়েছে।