রোববার এই শোকের মাঝেই সামরিক
শাসন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সংবাদ
মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর ‘হত্যাকাণ্ডে’ শিশুরাও রেহাই
পায়নি। জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যে, সামরিক বাহিনী ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অন্যতম জোট জেনারেল
স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিস্ট (জিএসসিএন) এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, “আমাদের বীরদের
সালাম জানাই, যারা এই বিপ্লবে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আমরা অবশ্যই এই বিপ্লবে
জয়ী হব।”
শনিবার সামরিক বাহিনী ও আদিবাসী
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও তুমুল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির
বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
সংখ্যালঘু কারেন সম্প্রদায়ের
একটি গ্রামে মিয়ানমারের সামরিক বিমানের হামলায় অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে
একটি সংগঠন।
এরআগে সশস্ত্র কারেন গোষ্ঠী-
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের একটি অংশ থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে সেনাবাহিনীর একটি চৌকি
গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে, যেখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। তারপরই এই বিমান হামলা চালানো
হয়। বিমান হামলার পর গ্রামবাসী জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে।
এই হামলা ও হত্যার বিষয়ে অবশ্য
সামরিক জান্তার মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য দেয়নি। সামরিক প্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাইং
শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কুচকাওয়াজ চলাকালে বলেন, সামরিক বাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষা
নিশ্চিত করবে এবং ‘গণতন্ত্র পুনর্বহালে’ কাজ করবে।
অনলাইন সংবাদ পোর্টাল মিয়ানমার
নাও জানিয়েছে, শনিবারের দমন অভিযানে দেশজুড়ে ১১৪ জন নিহত হয়। তাদের ৪০ জন মিয়ানমারের
দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালায়ে মারা গেছেন, ১৩ বছরের এক কিশোরীও রয়েছে তাদের মধ্যে।
বাণিজ্যিক নগরী ইয়াংগনে নিহত
হয়েছে ২৭ জন। ১৩ বছরের আরেক কিশোরী নিহত হয়েছে সাগাইং অঞ্চলে।
কাচিন অঞ্চল থেকেও মারা যাওয়ার
খবর পাওয়া গেছে। ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে দেশটিতে সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানির
সংখ্যা ৪৪০ ছাড়িয়েছে।
‘এই রক্তপাত আতঙ্কজনক’
মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত
টমাস ভাজদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃবিতে লিখেছেন: “এই রক্তপাত আতঙ্কজনক। মিয়ানমারের
নাগরিকরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে: তারা সামরিক শাসনের অধীনে থাকতে চায় না।”
আর মিয়ানমারে ইইউ প্রতিনিধি
দল বলেছে, “শনিবারের দিনটি নৃশংসতা আর অসম্মানের চিরস্থায়ী চিহ্ন হয়ে থেকে যাবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর
শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তার কাছাকাছি পদমর্যাদার ডজনখানেক কর্মকর্তা মিয়ানমারের সামরিক
বাহিনীর এহেন নিষ্ঠুর কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “পেশাদার
সামরিক বাহিনীর অবশ্যই কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে হবে এবং নিজেদের
নাগরিকদের রক্ষা ও তাদের আঘাত না করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু
এই রক্তপাত বন্ধে বিশ্ববাসীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা
পরিষদের মাধ্যমে নাও হয়, তাহলেও জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা
বলেছেন তিনি।
সামরিক জান্তা যাতে মিয়ানমারের
তেল-গ্যাস বিক্রি করে অর্থ জোগাড় করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান
টম অ্যান্ড্রু।
পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র নিন্দা
জানালেও মিয়ানমারের জান্তা সরকার একেবারে বন্ধুহীন নয়।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী
আলেকজান্ডার ফোমিন রাজধানী নেপিদোতে শনিবারের সামরিক কুজকাওয়াজে অতিথি হিসেবে উপস্থিত
ছিলেন এবং আগের দিন জান্তা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
কূটনীতিকরা জানান, আটটি দেশ-
রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ড তাদের প্রতিনিধি
পাঠিয়েছে ওই অনুষ্ঠানে। তবে একমাত্র রাশিয়া একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার প্রতিনিধি পাঠায়।
রাশিয়া এবং চীনের সমর্থন থাকায়
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত তোলা যায়নি জাতিসংঘে এবং নিরাপত্তা
পরিষদের এই দুই স্থায়ী সদস্য জাতিসংঘের সম্ভাব্য পদক্ষেপ ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে
রুদ্ধ করে দিতে পারে।
লন্ডনে মিয়ারমারের দূতাবাস জান্তাবিরোধীদের
নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখান থেকে ফেইসবুকের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, অং সান সু চির ছেল
কিম অ্যারিসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করেছেন রাষ্ট্রদূত। কিম অনুরোধ করেছেন, দূতাবাস
তার মায়ের সঙ্গে কোনোভাবে টেলিফোনে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে পারবে কিনা। মাকে নিয়ে
তিনি যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছেন বলেও ফেইসবুক বার্তায় উল্লেখ করা হয়।