ক্যাটাগরি

অর্ধেক আসনে যাত্রী, বাস আর থামে না

বুধবার ঢাকার মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টন, প্রেসক্লাব ও তোপখানা রোডের মোড়ে যাত্রীদের একরকম যুদ্ধ করে বাসে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর বেশির ভাগ রুটে বেসরকারি যে মিনিবাসগুলো চলাচল করে, সেগুলো কমবেশি ৫০ আসনের। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে সেগুলো যাত্রী পরিবহন করছে এখন।

কিন্তু অফিস-আদালত সব খোলা থাকায় গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বাসে উঠতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে যাত্রীদের। কোনো বাস স্টপেজে এলেই অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যাচ্ছে।

মালিবাগে ৬ নম্বর বাসের অপেক্ষায় থাকা হামিদুর রহমান নামের এক চাকরিজীবী বললেন, “করোনায় বাসে যাত্রীদের আসন সীমিত হওয়ায় আমাদের মত কম আয়ের মানুষ বিপদে পড়েছে। এমনিতেই গরম, তার ওপর মাস্ক পরে চলতে হয়। বাসে উঠতে গেলে বলে সিট নেই। কোথায় যাব বলেন?”

যারা বাস ভাড়ার চেয়ে কিছু বেশি খরচ করার সামর্থ্য রাখেন, তাদের জন্য রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেল গত কিছুদিনে একটি জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাসের ভাড়া বৃদ্ধির সাথে সাথে মোটরসাইকেলের ভাড়াও বেড়ে গেছে বলে জানালেন সাদেক খান নামের এক যাত্রী।

শান্তিনগর মোড়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “এতদিন মোড়ে মোড়ে লাইন ধরে মোটর বাইক দাঁড়িয়ে থাকত। ভাড়াও মোটামুটি আয়ত্বের ভেতরে ছিল। আজকে দেখি ভাড়া বেশি। কিছু্ বলার নেই, কেউ দেখারও নেই?”

গুলিস্তানে দেখা গেল অনেক বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ হয়ে গেছে। গেইট বন্ধ রেখে চলছে বলে স্টপেজে যাত্রী ওঠার সুযোগ নেই।

বোনকে দেখতে আজিমপুর মাতৃসদন কেন্দ্রে যাবেন সায়েমা খাতুন, প্রেস ক্লাব থেকে রিকশা না পেয়ে অপেক্ষা করছিলেন বাসের। কিন্তু এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি বলে জানালেন।

“রিকশা এখন দ্বিগুণ ভাড়া চাইছে। বাসও পাচ্ছি না। যেটাই আসছে সেটাই গেইট লক। আসন খালি নেই।”

বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির বাস বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “ভাড়া বাড়িয়েছে, কিন্তু পাবলিক বাসের সংখ্যা বাড়ায়নি। সিএনজিওলারাও যার যেমন ইচ্ছা ভাড়া হাঁকছে।”

এতদিন তোপখানা মোড় থেকে সবুজ অটোরিকশায় গুলশানে যাওয়া যেতে ২০০-২৫০ টাকায়। বুধবার দেখা গেল ৩০০ টাকার কমে যেতে রাজি নয় কেউ।

রামপুরা, মালিবাগ, শাহজাহানপুরের যারা সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন, তাদের সবাইকেই কমবেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে ছিল অফিসগামী যাত্রীদের জটলা, কিন্তু বাসে উঠতে পারছিলেন না তারা।

মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা গেল, বাসগুলো নির্দেশনা মেনে প্রতি দুই আসনে একজন করে যাত্রী পরিবহন করছে। আসন খালি না থাকায় পরের স্টপেজে আর গাড়ি থামছে না। ফলে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরের বাসের জন্য।

এই রুটের রজনীগন্ধা ও তরঙ্গ পরিবহনের বাসে উঠতে না পেরে যাত্রীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল মোহাম্মদপুরে।

মোটামুটি একই চিত্র ছিল চিটাগাং রোড, সানারপাড়, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ এবং শনির আখড়া এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও এসব স্টপেজে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন অফিসগামী অনেকে।  আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন।

চিটাগাং রোড থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন রাশেদ আলম নামে একজন। তিনি জানালেন, ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি।

“বাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলে যায়। অনেক বাস থামায়ই না। কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।”

যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাছে বাসের অপেক্ষায় থাকা আজিজুর রহমান বললেন, “বাসের দরজাই খোলে না। ওইদিক থেকেই ভর্তি হয়ে আসে। যানবাহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নিয়ম করেছে। কিন্তু অফিসে যেতে হচ্ছে সবাইকেই। অর্ধেক সিটে যাত্রী বহন করলে বাস আরও বাড়ানো দরকার ছিল।”

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বললেন, তারা নিয়ম মেনেই সব করার চেষ্টা করছেন। বাকিটা তাদের হাতে নেই।

“সরকারের নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় গণপরিবহন চলছে সকাল থেকে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিবহন পরিচালনা করতে আমরা সকলকে বলে দিয়েছি।”