বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ
আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি হয়।
শুনানিতে ছিলেন পিএলএফএসএল’র সাময়িক
অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।
এ নিয়ে ১২ জন ঋণ খেলাপি প্রায় ৯ কোটি
টাকার চেক ও পে-অর্ডার আদালতে জমা হয়েছে।
তার মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল
সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক আরেফিন শামসুল আলামিন গত ১৫ মার্চ সাড়ে ৮ কোটি টাকার
চেক ও ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯টি কিস্তির পে-অর্ডার হাই কোর্টে জমা দেন।
পরবর্তীতে প্রতিমাসে ৭৫ লক্ষ টাকা
কিস্ততে বাকি ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৮ টাকা পরিশোধেরও প্রতিশ্রুতি দেন। তার মোট
ঋণের পরিমাণ ৬৫ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪০৮ টাকা।
মূলত জব্দ ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে
এবং বিদেশে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে বাধা দূর করতে আবেদন করে এ প্রতিশ্রতি দিয়েছেন বলে
ওইদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন আরেফিন শামসুল আলামিনের আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক।
আরেফিন শামসুল আলামিন শামসুল আলামিন
রিয়েল এস্টেটের পরিচালক (অর্থ)।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “আজকে পাঁচটি চেক ও একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৬ জন ঋণ খেলাপি ১৯ লাখ টাকা
জমা দিয়েছেন।
এর আগে পাঁচজন মিলে জমা দিয়িছিলেন
২৩ লাখ ৯৭ হাজার সামথিং। এরপরে একজন আরও সাড়ে ৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। এই সাড়ে ৮ কোটি
টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকা পে-অর্ডারে ছিল। আর সাড়ে ৫ কোটি টাকার চেক ছিল।”
তিনি বলেন, “আজকে শুনানির তারিখ ছিল।
আজকে নতুন করে পাঁচ ছয়জন এসেছেন, যারা এর আগে আদালতের তলবে আসেননি। আর অনেকেই ডাউন
পেমেন্ট দেয়ার জন্যে সময়ের আবেদন করেছেন।”
পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি
টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করেছিল হাই
কোর্ট।
সাময়িক অবাসায়ক আসাদুজ্জামান খানের
দেওয়া তালিকা দেখার পর ওই আদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
সেদিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই
ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি আদালতে হাজির
হননি।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম,
দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের
গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
(বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে আদালত।
তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির
না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উচ্চ আদালত।
ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না
হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে
সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হল।
আর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল
সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে
ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং
রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।
এ কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে আইনজীবী
মেজবাহুর রহমান বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১২২ জনের ব্যপারে আদালত বলেছে, আইন
শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের ঠিকানা খুঁজে বের করতে। পিপলস লিজিংয়ের রেকর্ডে যে
ঠিকানা ছিল সে ঠিকানা ইতিমধ্যে তারা দিয়ে দিয়েছে। নতুন কোনো ঠিকানা তাদের কাছে নাই।
এখন তাদের ঠিকানা কিভাবে খুঁজে বের করবে এটা এখন দেখার বিষয়। এর জন্য পিপলস লিজিংয়ের
সাথে বসতে হবে। এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে বসা হয়নি।”
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান
হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের
কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম
পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির
আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে
খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান
দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও
ফেরত দিতে পারেনি তারা।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং
অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের
পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার
জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার
একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।
পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ
ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ
দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।