বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
দেশের বৃহত্তম এই ক্রীড়া আসরের সাফল্য কামনা করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আগাম শুভেচ্ছা থাকল, সফলভাবে আপনারা এটা সম্পন্ন করবেন; এবং প্রত্যেকেই যেন পারদর্শিতা দেখাতে পারেন।”
সেই সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুত করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা যেন আগামীতে অলিম্পিক গেমস বিশ্বের যেখানেই হবে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেন সেখানেই অংশগ্রহণের মত নিজেদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারি।”
সেজন্য ভবিষ্যতে ইভেন্ট ধরে ধরে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেইভাবেই আমরা তৈরি করতে চাই আমাদের খেলোয়াড়দের।”
ছবি: পিএমও
দেশের ২৯টি ভেন্যুতে ৫ হাজার ৩০০ জন অ্যাথলেটের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের এই আয়োজন ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এ ক্রীড়া আসর বসেছিল বাংলাদেশে।
দেশের বৃহত্তম প্রতিযোগিতাটি মাঠে গড়ানোর কথা ছিল গত বছর এপ্রিলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তা স্থগিত করা হয়।
এখন আবার দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনে চলার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি চাই না যে কোনো কারণে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোক। সেই কারণে সকলকে এবং যারা আয়োজক, তাদের এবং অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, তাদের বলব, আপনারা বিষয়টা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন যেন সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে পারেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের মশাল প্রজ্জ্বলিত হয়েছে টুঙ্গিপাড়া থেকে, যে মাটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আর যে মাটিতে তিনি ঘুমিয়ে আছেন।
জাতির পিতার রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশপাশি যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “খেলাধুলার প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব সময় আন্তরিকতা ছিল এবং তিনি সব সময় উৎসাহিত করতেন ও নিজে খেলতেন। আমার দাদাও খেলতেন, আমার ভাইয়েরাও খেলতেন। এমনকি ভাতৃবধূরা, তারাও খেলতেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বাংলাদেশের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারপর থেকে আমরা চেষ্টা করেছি যে আমাদের দেশের ছেলেমেয়ে, যুব সমাজকে খেলাধুলায় কীভাবে উৎসাহিত করা যায় এবং খেলাধুলা মানে শুধু… সব ধরনের খেলাধুলার দিকে আমরা নজর দিয়েছি। এমনকি আমাদের দেশীয় যে খেলাগুলো, সেগুলোও আমরা বাদ দিইনি।”
ছবি: পিএমও
দেশের সব উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট খেলা, ফুটবল খেলা বা অন্যান্য সব ধরনের গেমস যাতে হতে পারে, তার জন্যও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এটা আমি জানি যে ২০২০ সালে করোনার কারণে সব কিছুতেই একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে, এখন আবার দিচ্ছে। তবুও আমি মনে করি, আমরা এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় নিজের দুঃখের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমার সব থেকে খারাপ লাগছে যে করোনার কারণে আমি নিজে মাঠে উপস্থিত থেকে সবাইকে দেখতে পারলাম না।”
তারপরও বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলায় এখন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আসলে আমি খেলাধুলা নিজেও পছন্দ করি এবং সব সময় যে কোনো খেলায় আমি নিজে মাঠে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এবার পারলাম না, সত্যি এটা আমার জন্য খুব দুঃখজনক। তারপরও আমি বলব যে সকলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আমি আসিনি।”
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বিওএ সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।