শুক্রবার সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির দিনেই ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে হয়ে গেল এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা, যাতে জড়ো হয়েছে লাখো মানুষ। ছুটির দিনের বিকেলে বইপ্রেমীদেরও ঢল নেমেছিল অমর একুশে বইমেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬ হাজার ৮৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ৫০ জনের। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে। আর তাদের মধ্যে মোট ৯ হাজার ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা দেশে মহামারী শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর সোমবার প্রথমবারের মত এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। তার মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। তিন দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারও ছাড়িয়ে যায়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা নয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। সেই সংখ্যা এখনও না ছাড়ালেও তিন দিন ধরে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর ঘরে রয়েছে।
টানা কয়েক দিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও বেড়ে ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়েছে, যা গত ৬ অগাস্টের পর সর্বোচ্চ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, তার মধ্যেই শুক্রবার ছুটির দিনে বই মেলায় দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই মেডিকেল কলেজের বিলম্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করলেও ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ জন অংশ নিয়েছেন।
শুক্রবার বেলা ১০টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৫টি কেন্দ্রে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়, যা বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরের ১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪৭ হাজার।
মহামারীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না। বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছেন একাধিক অভিভাবক।
করোনাভাইরাস: এক দিনে রেকর্ড ৬৮৩০ রোগী শনাক্ত
কোনো কোনো কেন্দ্রের সামনে হাজারো অভিভাবক ভিড় করেছেন। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢুকেছেন হুড়মুড়িয়ে, ধাক্কাধাক্কি করে। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময়ও একই অবস্থা দেখা গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শুক্রবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় রাজশাহীর একটি কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়।
রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষা শুরুর পর অভিভাবকরা সামনের সড়কে অবস্থান করছেন। সড়কে বসেছে গাদাগাদি করে। অনেকের মুখে ছিল না মাস্কও।
পরীক্ষা শেষ হতে ভিড় আরও বাড়ে। ভিড়ের কারণে সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয় কিছু সময়।
তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। ইন্দিরা রোড জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ চোখে পড়েছে। একই রকম ভিড় ছিল ঢাকা কলেজের সামনেও।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষার হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও আসা-যাওয়ার পথে ভিড়ের কারণে সংক্রমণ ছিল। তবে জরুরি কারণে পরীক্ষাটা নেওয়ার দরকার ছিল।
“পরীক্ষা অনুষ্ঠানকে জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আমার সংক্রমণের ঝুঁকিও বিবেচনা করতে হবে। অভিভাবকরা যে বাইরে ভিড় করেছেন, তারা সমাজের সচেতন অংশ তারাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরে থাকেননি।”
“বিষয় হলো সবকিছু বন্ধ করে দিলে ভালো হয়। কিন্তু তাতে সংক্রমণ হয়তো কমবে কিন্তু মানুষ তো না খেয়ে, অপুষ্টিতে মরবে। স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চললে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে কোনো সমস্যা ছিল না।”
তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর দাবি করেছে, এমবিবিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানা হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, তার মধ্যেই শুক্রবার ছুটির দিনে বই মেলায় দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়।
সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের ৫৫টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়েছে।”
শুক্রবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, আবদুল মান্নানের শারীরিক অবস্থা ভালো।
এদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা খাতুনেরও করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার খবর আসে। তবে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।