গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গণমানুষের টানা বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে চলছে গুলি।
এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সাড়ে পাঁচশর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
তারপরও সাধারণ মানুষকে দমানো যায়নি। বড় নগরীর তুলনায় এখন ছোট ছোট শহরগুলোতে লোকজন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ করছে।
শনিবার মধ্যাঞ্চলের শহর মনিওয়াতে এরকম একটি বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ।
এছাড়া, দক্ষিণের থাতন শহরে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মধ্যাঞ্চলের আরেক শহর বাগোতে প্রাথমিকভাবে এক বিক্ষোভকারী নিহতের খবর পাওয়া গেলেও পরে জানা যায় তিনি মারা যাননি, আহত হয়েছেন।
একটি ম্যাসেজিং অ্যাপে মনিওয়া শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘তারা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ক্রমাগত স্টান গ্রেনেড এবং তাজা গুলি ছুড়তে থাকে।
‘‘লোকজন দ্রুত পিছু হটে এবং অবরোধ তুলে নেয়…। কিন্তু আমার সামনেই এক ব্যক্তির মাথায় গুলি লাগে এবং তিনি সেখানেই মারা যান।”
এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে পুলিশ ও জান্তাবাহিনীর মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
‘দ্য অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনার্স’ এর হিসাব অনুযায়ী গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শনিবারের আগ পর্যন্ত সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে মিয়ানমারে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু।
মূলত অনলাইনে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা সংগঠিত হচ্ছেন। যা বন্ধ করতে জান্তাবাহিনী দেশটিতে ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
মোবাইল ডেটা আগেই বন্ধ করা হয়েছে। শুক্রবার তারহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহকারীদেরও সেবা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরপরও অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো নানা বার্তা বা ছবি পোস্ট করা হচ্ছে এবং সেগুলো শেয়ার হচ্ছে বলে জানায় রয়টার্স।
এদিকে শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেশটির সুপরিচিত ১৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং তাদের দায়িত্বকে অসম্মান করে এমন উপাদান তৈরি করার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা জানানো হয়। ওই ১৮ জনের মধ্যে দুইজন সাংবাদিকও আছেন।
তারা সবাই সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে আওয়াজ তুলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণিত হলে তাদের তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।