কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলা নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে চর
কুলাঘাট
গ্রামের
হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে
মিজানুর চিকিৎসক হয়ে তার বন্যাপীড়িত এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবার করার স্বপ্ন দেখেন।
২০১২ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মিজানুরের দিনমজুর বাবা মফিজ উদ্দিন মারা যান। ছয় সন্তানকে
নিয়ে তার মা জোবেদা বেগম দুর্দশার মধ্যে
পড়েন।
তবু হার মানেননি তিনি; ধার-দেনা, কষ্টের উপার্জন আর শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় ছেলের স্বপ্নকে এতদূর এগিয়ে এনেছেন তিনি। এখন অর্থাভাবে
মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
জোবেদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “মাইনসের
বাড়িত কাজ করে, ঘরোত থোয়া মুষ্টির চাউল বেচে, ধারদেনা করে খুব কষ্ট করে ছওয়াটাক এতদূর
নিয়ে আছচুং বাহে, মোর কিচ্ছু নাই।”

ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে
দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিজানুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, ভর্তি ফি, পড়ালেখার উপকরণ ও কঙ্কাল, পোশাক
এবং আনুষাঙ্গিক খরচসহ প্রায় এক লাখ টাকা দরকার।
মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করে চিকিৎসক হয়ে
মায়ের স্বপ্ন পূরণে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সবার সহযোগিতা ও নিজের চেষ্টায় মিজানুর এত দূর
এগিয়েছে।
“মেডিকেলে পড়তে যে অর্থের প্রয়োজন তার যোগান দেওয়া তার ও পরিবারের পক্ষে খুবই কষ্টকর।”
এই ইউনিয়নে মিজানুরই প্রথম ভর্তি পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে তিনি জানান।
মেধামী মিজানুরের লড়াই
মিজানুর গোল্ডেন জিপিএ-ফাইভ পেয়ে চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মিজানুর ছাড়া শুধু
বড় ভাই মজিদুল এসএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন।
নবম শ্রেণি থেকেই টিউশন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে গেছেন মিজানুর। গ্রামে ৮ শতক জমির ওপর
ছোট একটি বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই তাদের।

মিজানুরের সাফল্যে খুশি এলাকাবাসী
মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় মিজানুরের
উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে
দারুন উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। মঙ্গলবার তার বাড়িতে গেলে দেখা যায় পাড়া-পড়শির ভিড়।
মিজানুরের বন্ধু সোলায়মান আলী বলেন, “মিজানুর নবম শ্রেণি থেকে টিউশন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতো। আমাদের প্রধান শিক্ষক তাকে সহায়তা করতেন।”
প্রতিবেশি নাসিমা বেগম বলেন, “ছোট থাকি মিজানুরকে দেখছি খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। পড়াশোনায় সে খুব ভাল। সরকারের কাছে হামরা মিজানুরের জন্য সহযোগিতা চাই। সে যেন পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে আসে।”