আইসিডিডিআর,বি বুধবার তাদের
ওয়েবসাইটে গবেষণার যে ফল প্রকাশ
করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে করোনাভাইরাসের যে ধরনগুলো সক্রিয়
ছিল, তার ৮১ শতাংশই দক্ষিণ
আফ্রিকার ভ্যারিয়ান্ট।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআরের সঙ্গে মিলে গত ডিসেম্বর থেকে
এই গবেষণা শুরু করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি।
ওই
সময় করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট (B.1.1.7), দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট (B.1.351) এবং ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্ট (P1/P2) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, এই
তিনটি ধরনেরই সংক্রমণ ঘটানোর সক্ষমতা বেশি; জিনগত পরিবর্তনও ঘটেছে বেশি, যা রোগীর চিকিৎসা
পদ্ধতি এবং টিকার কার্যকারিতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষকরা
গত ১ জানুয়ারি থেকে
২৪ মার্চ পর্যন্ত সময়ে মোট ১৬ হাজার ২৬৫
জনের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং তার মধ্যে ২ হাজার ৭৫১টি
নমুনা ‘পজিটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ১৭ শতাংশ।
পজিটিভ নমুনাগুলোর মধ্যে ৪৪৩টি নমুনার স্পাইক জিন সিকোয়েন্সিং করা হয়।
আইসিডিডিআর,বির করা সিকোয়েন্সিংয়ে ৬ জানুয়ারি প্রথমবার
যুক্তরাজ্যের ধরনটি শনাক্ত হয়। অবশ্য করোনাভাইরাসের এ ভ্যারিয়েন্টটি গতবছরের
ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশে আছে বলে সার্স-সিওভি-২ সিকোয়েন্স ডেটাবেইজে
তথ্য রয়েছে।
আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় দেখা যায়, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যের ধরনটির সক্রিয়তা বাড়ছিল। সে সময় সক্রিয়
সবগুলো ধরনের মধ্যে ৫২ শতাংশ ছিল
ইউকে ভ্যারিয়েন্ট।
Source: International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh or icddr,b
কিন্তু
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়ান্টটি আবির্ভূত হলে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যায়। অন্য সব ধরনকে ঠেলে
দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। মার্চের শেষ সপ্তাহে সক্রিয় সবগুলো ধরনের মধ্যে ৮১ শতাংশ ছিলই
ছিল আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট।
গবেষকরা
বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন নিয়ে এখন নিয়মিত নজরদারি দরকার, কারণ রোগী ব্যবস্থাপনা ও টিকার কার্যকারিতার
জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাসের
ব্যাপক বিস্তার রোধ সবাইকে প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জোর দিতে তাগিদ দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি।
এক
বিবৃতিতে এ সংস্থা বলেছে,
মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা চালিয়ে যেতে হবে। যে কোনো ধরনের
জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
“আপনি
টিকা নিয়ে থাকলেও বা এর আগে
আক্রান্ত হয়ে থাকলেও প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানতে হবে। সর্বোপরি সরকার নির্ধারিত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।”
মার্চের
মাঝামাঝি সময় থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুব দ্রুত বাড়ছে। বুধবার একদিনেই ৭ হাজার ৬২৬
জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা দৈনিক শনাক্ত
রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগের দিন মঙ্গলবার এক দিনে রেকর্ড
৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে।
দেশে
এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৯
হাজার ২৭৮ জনে। তাদের মধ্যে ৯ হাজার ৪৪৭
জনের মৃত্যু হয়েছে।