ক্যাটাগরি

শার্শায় পানির জন্য হাহাকার

পানির স্তর ৩০ ফুটের বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম শরীফ জানান।

গোলাম শরীফ বলেন, সাধারণত বর্ষার সময়ে পানির স্তর ৫ থেকে ৭ ফুট গভীরে (নিচে) থাকে। তবে এখন সেটা ৩০ ফুটেরও বেশি নিচে নেমে গেছে। ২২ ফুট পর্যন্ত পানি নিচে নামলেও হস্তচালিত নলকূপে পানি তোলা সম্ভব, তবে এর বেশি হলে পাম্প (হাওয়া) সৃষ্টি হয়। পানি উঠতে চায় না।

“বেনাপোল পৌরসভাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে বাগআঁচড়া, উলাশি ও কায়বা ইউনিয়নে পানির স্তর ২৭ ফুট থেকে ৪০ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। এতে মানুষ পড়েছে চরম পানি সঙ্কটে।যেসব স্থানে পানি উঠছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।”

পানি না থাকায় ভোগান্তির কথা জানালেন জামতলার ছখিনা খাতুন (৬৫)।

তিনি বলেন, “জামতলা প্রাইমারি স্কুলে দুটো আর্সেনিক মুক্ত কল বসানো আছে। ওই কলের পানি সবাই খাতাম। বেশ ক’দিন ধরে ওই কলে পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়ি যেয়ে পানি আনতি হচ্ছে।”

টেংরা গ্রামে কথা হয় মমতাজ বেগমের (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, “টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলিও পানি আসছে না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছি।“

সামটা গ্রামের ফতেমা বেগম (৫৫) বলেন, “রান্নাবান্নাসহ সব কাজেই পানি লাগে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, অনেক দূর থেকে পানি আনতি হচ্ছে। আশপাশের সবার বাড়িতেও একই সমস্যা। যে কলে পানি উঠছে সেখানে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতি হয়।”

জামতলা বাজারের চায়ের দোকানদার আব্দুল কাদের বলেন, “জামতলা বাজারের অধিকাংশ হস্তচালিত কলে পানি উঠছে না। একটিমাত্র সাবমার্সিবল পাম্পে পানি ওঠছে। ওই নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। সেটাও আবার সব সময় পাওয়া যায় না। হাতে কলস ও বালতি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় ।”

টেংরা গ্রামের মেম্বর মোজাম্মেল হক গাজি বলেন, এই এলাকার শতভাগ অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে তাই সরকার বিভিন্ন স্থানে আর্সেনিকমুক্ত গভীর হস্তচালিত নলকূপ বসিয়ে দেছে। শুধু গভীর নলকূপ নয়, অগভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

বাগআচড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফুলছুরাত জানান, এলাকার অধিকাংশ আর্সেনিকমুক্ত গভীর হস্তচালিত নলকূপের পানি তোলা যাচ্ছে না। এসব নলকূপ অন্তত ৮০০ ফুট গভীরে বসানো।

তবে সরকারি ভাবে এখন কয়েকটি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে, যা থেকে এলাকাবাসি পানি সংগ্রহ করছে।

নাভারন ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বুলি বলেন, প্রতিবছর অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উঠানো হচ্ছে, সেই পরিমাণ পানি ভূগর্ভে পৌঁছাচ্ছে না। আবার প্রতিবছর বৃষ্টিপাতও কম হচ্ছে; যে কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা রোধ করা প্রয়োজন।

কৃষিকাজে পরিকল্পিতভাবে পানির ব্যবহার করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে আশঙ্কা এ শিক্ষকের। 

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। গরমের শুরুতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে এ সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।