রোববার দেশের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন
তিনি। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রী জানান,
খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে এই বৈঠকে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে কিভাবে এগুতে হবে সেসব বিষয়ে পরামর্শ
উঠে এসেছে।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে একই সঙ্গে
কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের উৎস বন্ধ
করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
বৈঠকে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান ও
সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ
ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও
ড. আতিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ, বিআইডিএসের
জ্যেষ্ঠ গবেষণা
পরিচালক নাজনীন আহমেদসহ বেশ
কয়েকজন অর্থনীতিবিদ অংশ নেন।
বৈঠকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে
যথাযথভাবে কর প্রদানকারী নাগরিকরা অনুৎসাহিত হন বলে অর্থনীতিবিদররা তাদের পর্যবেক্ষণ
দিয়েছেন জানিয়ে
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “কালো টাকা বলে কোনো টাকা নেই। অপ্রদর্শিত টাকা আছে।“
এ সময় তিন
দেশে বেশি দামে জমি বিক্রি করে সরকারকে কম দেখানোর প্রবণতার বিষয়ে
উদারহণ দিয়ে বলেন, আগে জায়গা জমি যে কোনো দামে বেচাকেনা হতো। কেউ চ্যালেঞ্জ করে
নাই। কম দামে বেচাকেনার জন্য কেউ
বিষয়টি সরকারের
নজরে আনেনি।
তিনি বলেন, “এখন আমাকে যে কোনো কারণে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের উৎস বন্ধ করতে হবে। উৎস বন্ধ করতে হলে একদিনে পারা যাবে না। এটা বন্ধ করার জন্য আরও সময় নিতে হবে।
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো আমরা বন্ধ করবো” যোগ করে
তিনি বলেন, “অপ্রদর্শিত টাকা এগুলো আমাদের সিস্টেমের কারণে হয়।“
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা
কামাল আগামী বাজেট প্রণয়নের মূল দিকগুলোর বিষয়ে বলেন, “আগামী বাজেটে যেসব খাত মানুষের জীবন জীবিকার
সঙ্গে জড়িত সেগুলো
প্রাধান্য পাবে। এরমধ্যে রয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে এমন খাত খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়েই যে সমস্যা,
তা মাথায় রেখেই বাজেট তৈরি করতে হবে। এই ধরণের অবস্থা আগে কখনোই মোকাবিলা করতে হয়নি। এমন
পরিস্থিতি কত দিন থাকবে সেটা আমরা জানি না। জানলে সেভাবে বাজেট তৈরি করতাম।“
অর্থনীতিবিদদের পরামর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, “বৈঠকে অর্থনীতিবিদরা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সবাই এসেছেন কিনা, যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটা সবার কাছে গেছে কিনা,
সেগুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
“অর্থনীতিবিদরা প্রণোদনার প্যাকেজ সম্প্রাসারণের
পাশাপাশি মেয়াদও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।”
মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।”
“অর্থনীতিবিদরা চলমান মহামারীর প্রেক্ষিতে মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক করতে বলেছেন, যাতে আমরা সবাইকে সাপোর্ট দিতে পারি। সবার হাতে যেন পয়সা থাকে। সবাই যেন জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।“
আগামী বাজেটে কোভিড
পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সেবা বাড়াতে মনোযোগ বাড়ানো হবে
জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে মান সম্পন্ন সেবা দিতে
বাজেটে সবই বলা থাকবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি
বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরীব মানুষের প্রতি খুবই সহনশীল। আগে যেমনভাবে তিনি মানুষকে দেখতেন লকডাউনের সময়ও তিনি তা করবেন। কারণ তার
চিন্তায় হলো দেশের মানুষের জীবিকার।”
“লকডাউনের সময় কী পদক্ষেপ নেবেন সে বিষয়ে
নির্দেশনা দেবেন।“
জিডিপির অনুপাতে
রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার কারণ ব্যখ্যায়
তিনি বলেন, “দেশে প্রতিটা আইটেমে যে পরিমাণ ট্যাক্স নেওয়ার প্রয়োজন সেটা
যদি নিতে পারতাম তাহলে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিওটা আরো ভাল হয়ে যেত।“
“আমরা অনেক জায়গায় ট্যাক্স আদায় করি না, ছাড় দিয়ে দেই। কোথাও জিরো বা ১ শতাংশ নিয়ে ছাড় দিচ্ছি।“
তিনি বলেন, সরকারের অনেক মেগা প্রকল্পে
নানা ভাবে ছাড়
দিচ্ছি। তা না
হলে এসব প্রকল্পের ব্যয় আরও অনেক বেড়ে
যেত। তবে গত বছর থেকে কিছুটা কাজ শুরু
হয়েছে। এবছরও তা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।