জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী (৪৫) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের
জন্য রোববার বিকালে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানা গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর
সম্পাদক। যাকে এ ঘটনার পর বহিষ্কার করেছে তার দল।
গত শনিবার দুপুরে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে নিহত জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীর
ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান জানান, সাতদিনের রিমান্ড চাইলে
শুনানি শেষে গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম নজরুল ইসলাম চারদিনের রিমান্ড
মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বাদী হয়ে এ মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আসামি
করে এ হত্যা মামলা করেছেন।
সুদে টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে মাসুদ রানা তার বাড়িতে হাসানকে এক মাস
ধরে আটকে রেখে হত্যা করেন বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ।
ঘটনার নেপথ্যের বিবরণ দিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বলেন, আমার স্বামী
মাসুদ রানার কাছে দেড় লাখ টাকা দাদন (ঋণ) নেন। সেই টাকা সুদ ও আসলে বর্তমানে ১৯ লাখ
ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেন মাসুদ রানা।
“গত ৫ মার্চ মাসুদ রানা ওই টাকার জন্য লালমনিরহাটের এক বিয়ের অনুষ্ঠান
থেকে আমার স্বামীকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে গাইবান্ধায় আসেন। তিনি তাকে গাইবান্ধা
শহরের খানকা শরীফ সংলগ্ন সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে তার বাসায়
আটকে রাখেন।
“টাকার জন্য তিনি আমার স্বামীকে মানসিক ও শারীরক নির্যাতন এবং নানা ধরণের
হুমকি দেন।”
এসব নির্যাতনের কথা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে স্বামীকে উদ্ধারের জন্য গাইবান্ধা
সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ
হোসেন এবং অজ্ঞাত পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানার বাড়ি থেকে তার স্বামীকে সদর থানায় নিয়ে
আসেন।
“আমাদের উপস্থিতিতে মজিবুর রহমান আমার স্বামীকে আমার জিম্মায় না দিয়ে মাসুদ
রানার পক্ষ গ্রহণ করেন। তিনি মাসুদ রানার টাকা ফেরত দিতে এবং আমাকে নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে
অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষর করতে বলেন “
এতে বিথী বেগম রাজি না হওয়ায় পরিদর্শক মজিবর তার স্বামীকে মাসুদ রানার
জিম্মায় দেন বলে অভিযোগ করছেন নিহতের স্ত্রী।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান
বলেন, “ওসি সাহেবের নির্দেশে উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বাড়ি থেকে মাসুদ রানা এবং হাসান
আলীকে থানায় নিয়ে আসে। তারা সালিশ দরবার করে কিন্তু হাসানকে মাসুদ রানার হাতে তুলে
দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মাসুদ রানার
হাতে হাসান আলীকে তুলে দেয়নি।
“থানা চত্বরে সালিশ বৈঠকের পর হাসান আলী, তার স্ত্রী বিথী বেগম এবং মাসুদ
রানাসহ উভয়পক্ষের লোকজন একসঙ্গে হেঁটে থানা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা কী করেছে, পুলিশ
তা জানে না।”
তবে নিহত ব্যবসায়ীকে তুলে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রাহাত গাওহারীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে
বলে দুপুরে কার্যালয়ে প্রেস প্রিফিং এ গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
জানান।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আবু
খায়ের এবং পুলিশ পরিদর্শক আবদুল লতিফ মিয়া।
শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন হয় জানিয়ে পুলিশ সুপার তৌহিদুলম বলেন, কমিটিকে
আগামি সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে কোনো কর্মকর্তার
বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড়
দেওয়া হবে না।
হত্যার বিচার চেয়ে
প্রতিবাদ
রোববার দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, আ.লীগ নেতা মাসুদসহ জড়িত পুলিশ
কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে জেলা শহরের ডিবি রোডে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
বিকালে প্রতিবাদ সভা করেছে গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
রোববার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, এ হত্যাকাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে মাসুদ
রানাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।