শুক্রবার
‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক
এক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায়
হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের
গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে আয়োজক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
মোজাম্মেল
হক বলেন, “হেফাজতে ইসলাম জামায়াতের মতো একই ধারায় ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা দখল করতে চায়- তা সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তাণ্ডব ও কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত পরিস্কার।
“স্বাধীনতা
মানে না বলেই তারা সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের
শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা।”
তিনি
বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন হেফাজতকে কোথাও
দেখা যায়নি। এবার তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার জন্যই মোদীর বিরোধিতার
কথা বলে সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে।
বিলম্বে
হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায়
অংশ নিয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “হেফাজত যদি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে, তাহলে
মাদ্রাসায় বাচ্চাদের ভর্তি করে আমরা কেন তাদের সদস্য তৈরি করে দিচ্ছি? মাদ্রাসাগুলো থেকে আমরা দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছি না।
“দারিদ্রতার
কারণে বাবা মা তাদের কোমলমতি শিশুদের মাদ্রাসায় পাঠায়। আমরা দরিদ্র মা-বাবাদের সন্তানের
জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-হোস্টেল এগুলো তৈরি করছি না। এ বিষয়গুলো আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থায়
রাখতে হবে।”
নির্মূল
কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, হেফাজতের ১৩ দফা জামায়াতেরই পুরনো দাবি। মুক্তিযুদ্ধকালে
হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতারা নেজামে ইসলামের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দল এবং তাদের ঘাতক বাহিনী
জামায়াতের চেয়ে কম নৃশংস ছিল না।
“এখন
তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরসূরিরা আরও ভয়ঙ্কর ভাষায় ভিন্নমত ও ভিন্নধর্মের মানুষের
উপর হামলাসহ এবং যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।”
হেফাজতের
সঙ্গে আপোষ সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবীর বলেন, “প্রশাসন মাঠপর্যায়ের
হেফাজত কর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও মামুনুল, বাবুনগরীর মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসের গডফাদারদের
এখন পর্যন্ত কেন গ্রেপ্তার করছে না- এটা আমাদের বোধগম্যের বাইরে।
“হেফাজতের
মতো জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যে কোনও ধরনের সমঝোতা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্য
আত্মঘাতী হবে না, অন্তিমে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, যা বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত
চক্রের মূল উদ্দেশ্য।”
বাংলাদেশের
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিযোগ করেন হেফাজতের নেতাদের বেশিরভাগ জামায়াতের
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তিনি
বলেন, “২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে জামাতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। হেফাজতের বর্তমান
আমির বাবুনগরী জামাতের প্রতিনিধি। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পরেও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে
সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বড় অংশ ১৯৭১-এ স্বাধীনতাবিরোধী
কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ জামায়াত-এর রাজনীতির সাথে
যুক্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতিতে যুক্ত। মোদীবিরোধী বিক্ষোভ ছিল মূলত
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী নস্যাৎ করার চক্রান্ত। তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে তালেবানি অভ্যুত্থান
ঘটানো। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে জ্ঞাত নয়।”
মেনন
বলেন, “ভবিষ্যতে তারা সকল ইসলামিক দলগুলোকে এক জায়গায় এনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা
করছে এবং বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। এসব বিষয়ে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে
হবে। সর্বনাশের বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হেফাজতের তাণ্ডব
ও রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দলগুলোর ভেতর হেফাজতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী
রাজনীতি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হবে এবং বিভ্রান্তি দূর করতে হবে।”
জাতীয়
সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “হেফাজত ও জামায়াত ধর্মের লেবাসধারী
পাকিপন্থার নব্য রাজাকারচক্রের সংগঠন। তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয় ও তারা দ্বৈতনীতি
অবলম্বন করে। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় এবং গোপনে সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশবিরোধী, কখনও প্রকাশ্যে, কখনও সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রের
বিরোধিতা করছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সন্ত্রাসের দায়ে বাবুনগরী, মামুনুলসহ সকল নেতৃবৃন্দকে
গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।”
ইনু দেশের
সকল মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করে বলেন, “সকল মসজিদে রাজনৈতিক বক্তব্য
নিষিদ্ধ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ দূর করতে হবে। সরকারের প্রতি আবেদন
জামাত-হেফাজত-বিএনপিকে আলাদা করার রাজনীতি বাদ দিয়ে এদেরকে এক ব্রাকেট করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের
চেতনাবিরোধী ও বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিতে হবে। সাপের শেষ রাখতে
নেই এবং বেঈমানকে ক্ষমা করতে নেই।”
ওই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক
শাহরিয়ার কবির। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী রাশেক রহমান, ব্লগার এ্যাণ্ড
অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি কানিজ আকলিমা সুলতানা, ওয়ান বাংলাদেশের সভাপতি
অধ্যাপক রাশেদুল হাসান, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্কের সাধারণ
সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক
কাজী মুকুল প্রমুখ।