এর আগেও বিভিন্ন গবেষণায় করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
তবে বৃহস্পতিবার ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনেই প্রথম ভাইরাসটির ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণই সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী’ বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে, জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নির্গত বড় বড় ড্রপলেট বা জলকণার এবং সেসব ড্রপলেট যে যে তলে পড়ে তা দূষিত হওয়ার পর সেসবের সংস্পর্শে এসে অন্যরা সংক্রমিত হয় বলে মহামারীর শুরুর দিক থেকে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য চীনের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার কয়েক মাস পর, গত বছরের জুলাইয়ে ৩২টি দেশের প্রায় ২০০ বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা চিঠিতে করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এমন প্রমাণ আছে বলে জানিয়েছিলেন।
নতুন এ গবেষণাও একই কথা বলছে।
“বায়ুবাহিত সংক্রমণ যে অনেক অনেক বেশি এবং বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ যে খুব একটা হচ্ছে না- আমাদের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ তাতে সমর্থন দিচ্ছে,” বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এমনটাই বলেছেন গবেষক দলের সদস্য, কলরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসে-লুইস জিমেনেজ।
“এখন জরুরি হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলো যেন তাদের সংক্রমণ সংক্রান্ত বর্ণনা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়; তাহলে বায়ুবাহিত সংক্রমণ কমানোর দিকে নজর দেওয়া যাবে,” বলেছেন তিনি।
এ গবেষকরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রকাশিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পর্যালোচনা করেছেন এবং তাদের দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে ১০টি কারণ উদ্ধৃত করেছেন। যার মধ্যে আছে কয়ার কনসার্ট, প্রমোদতরী ও বিভিন্ন কেয়ার হোমগুলোর ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গও।
এসব ঘটনায় ব্যাপক সংক্রমণের যে প্যাটার্ন পাওয়া যায়, তা ড্রপলেট বা ভাইরাসে দূষিত পদার্থ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না; বরং ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণের আধিপত্যের’ ইঙ্গিত মেলে, বলছেন গবেষকরা।
‘সুপার স্প্রেডার’ ঘটনাগুলোতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এক ব্যক্তির মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এই ‘সুপার স্প্রেডার’ ঘটনাগুলোকেই অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ল্যানসেটে প্রকাশিত এ গবেষণায় সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের সংক্রমণের হার বাইরের তুলনায় চার দেয়ালের ভেতরেই বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চার দেয়ালের ভেতর বাতাস চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে সংক্রমণের হার অনেক কমে আসে, যা ভাইরাসটির কণাগুলো বাতাসে টিকে থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত দেয় বলে মন্তব্য গবেষকদের।
উপসর্গহীন ব্যক্তি, যাদের কাশি বা হাঁচি নেই, তারাও মোট সংক্রমণের অন্তত ৪০ শতাংশ- অন্য এক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়েও ভাইরাসটি যে বায়ুবাহিত তার ইঙ্গিত মেলে বলে ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।