মঙ্গলবার বোয়াও ফেরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মানবাধিকার লংঘনসহ একাধিক বিষয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে এ আহ্বান জানালেন তিনি।
শি তার বক্তৃতায় কিছু সংখ্যক দেশের ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি’ ও ‘বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার’ চেষ্টারও সমালোচনা করেন; বলেন, এ ধরনের চেষ্টা অন্যদের ক্ষতি করবে এবং কারোই লাভ হবে না।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের আধিপত্যের বদলে বিশ্ব ব্যবস্থায় নিজেদেরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের আরও প্রতিফলন দেখতে চাওয়ার কথা বলে আসছিল।
বিদ্যমান বৈশ্বিক শাসন কাঠামোর সবচেয়ে বড় শরিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের মানবাধিকার থেকে শুরু করে অন্য দেশের ওপর বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাবসহ একাধিক বিষয়ে বিরোধ চলছে।
“বিশ্ব ন্যায়বিচার চায়, আধিপত্য নয়। একটি বড় দেশকে তখনই বড় দেশ হিসেবে দেখতে হবে, যখন সে আরও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে,” ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় এমনটাই বলেছেন শি।
তিনি তার বক্তৃতায় সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনা কর্মকর্তারা বাণিজ্য ও ভূ-রাজনীতিতে ওয়াশিংটনের ক্ষমতা দেখানোর চর্চাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আধিপত্যবাদী আচরণ’ অভিহিত করে জনসমক্ষেই এর সমালোচনা করে আসছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে অন্য কোনো দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে জো বাইডেন চীনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সঙ্গে ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে চীনই ছিল সবার উপরে।
দুই নেতা পরে জানান, বৈঠকে তারা হংকং এবং চীনের শিনজিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন।
বেইজিং শিনজিয়াংয়ের মুসলিম উইঘুরদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ওয়াশিংটন অভিযোগ করলেও চীন তা অস্বীকার করে আসছে।
চীনকে বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নিদর্শনস্বরূপ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ফাইভ জি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জেনোমিক্স ও সেমিকন্ডাক্টর সরবাহ চেইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে হওয়া তুমুল ‘শুল্ক যুদ্ধের’ কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চীনের বাণিজ্য চর্চা। ওয়াশিংটনের অভিযোগ ছিল, বেইজিংয়ের অন্যায্য সহায়তা বিদেশে চীনা কোম্পানিগুলোকে অন্যায্য সুবিধা দিচ্ছে এবং প্রযুক্তি ও মেধাসত্ত্ব স্থানান্তরে বাধ্য করছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দাভোস সম্মেলনের পাল্টায় এশিয়ায় বোয়াও ফোরামের এবারের সম্মেলনে চীনের বক্তারা বিশ্বজুড়ে অবাধ বাণিজ্যে বেইজিংয়ের প্রতিশ্রুতির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
“২০ বছর আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনের প্রবেশের পর সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে- আমরা চীনারা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ভয় পাই না,” সোমবার বোয়াও ফোরামে এমনটাই বলেছেন ২০০১ সালে ডব্লিউটিওতে চীনের প্রবেশের সময় দেশটির পক্ষে প্রধান মধ্যস্থতাকারী লং ইয়ংতু।