কাম্প নউয়ে বৃহস্পতিবার রাতে লা লিগার ম্যাচে ৫-২ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। জোড়া গোল করার পাশাপাশি রোনালদ আরাহোর গোলে অবদান রেখে ম্যাচের নায়ক মেসি। স্বাগতিকদের শেষ গোলটি করেন অঁতোয়ান গ্রিজমান।
গত অক্টোবরে ঘরের মাঠে বার্সেলোনাকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল গেতাফে। সেটাই ছিল মৌসুমে মেসিদের প্রথম হার।
লিগে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর গত রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে হেরে বসে বার্সেলোনা। অবশ্য সেই ধাক্কা ইতোমধ্যে দারুণভাবে সামলে নিয়েছে তারা; গত শনিবার আথলেতিক বিলবাওকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ঘরে তুলেছে কোপা দেল রে শিরোপা। আরেকটি দারুণ পারফরম্যান্সে লিগেও জয়ের পথে ফিরল কুমানের দল, শিরোপা ভাগ্য রাখল নিজেদের হাতেই।
বিতর্কিত সুপার লিগে এখনও টিকে থাকা চার দলের একটি বার্সেলোনার ম্যাচের শুরুটা হতে পারতো দারুণ। এগিয়ে যেতে পারত তৃতীয় মিনিটেই। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে মেসির বুলেট গতির শটে বল ক্রসবারের ভিতরের দিকে লেগে গোললাইনে ড্রপ খেয়েও চলে আসে।
গোলের জন্য স্বাগতিকদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। অষ্টম মিনিটে মেসির নৈপুণ্যে এগিয়ে যায় তারা। সের্হিও বুসকেতসের রক্ষণচেরা থ্রু পাস বার্সেলোনা অধিনায়ক পান মাঝমাঠে। সেখান থেকে দারুণ ক্ষিপ্রতায় সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শটে খুঁজে নেন ঠিকানা। পেছন থেকে এক ডিফেন্ডার ধাক্কা দিলেও ভারসাম্য হারাননি তিনি।
তবে ব্যবধান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। দ্বাদশ মিনিটে গোল হজম করে দলটি।
বাঁ দিক থেকে মার্ক কুকুরেইয়ার ক্রসে ফ্লিক করেন আনহেল রদ্রিগেস, বল লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না। কিন্তু ক্লেমোঁ লংলের গায়ে লেগে জড়ায় জালে। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।
২৮তম মিনিটে আবারও আত্মঘাতী গোল, তবে এবার বল গেতাফের জালে।
প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণে বল ডি-বক্সের বাইরে পেয়ে কি বুঝে গোলরক্ষককে ব্যাকপাস দিলেন ডিফেন্ডার সোফিয়ান চাকলা, দেখলেনও না অনেকটা এগিয়ে এসেছেন দাভিদ সোরিয়া। বল তার পাশ দিয়ে গড়াতে গড়াতে খুঁজে নিল ঠিকানা। রক্ষণের অমার্জনীয় ভুল!
পাঁচ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ান মেসি। প্রথমে তার ডান পায়ের কোনাকুনি শটে বল ঝাঁপিয়ে পড়া সোরিয়ার আঙুল ছুঁয়ে দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ক্লিয়ার করতে পারেনি কেউ, ফিরতি বল এবার গোলমুখে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে স্কোরলাইন ৩-১ করেন রেকর্ড সাতবারের পিচিচি ট্রফি জয়ী। এবারের লিগে তার গোল হলো সর্বোচ্চ ২৫টি।
বিরতির পরও একইরকম প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে খেলতে থাকে বার্সেলোনা। খেলার ধারার বিপরীতে সফল স্পট কিকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান এনেস উনাল। খানিক আগে বদলি নামা এই তুর্কি ফরোয়ার্ডকে আরাহো ফাউল করলে পেনাল্টিটি পায় গেতাফে।
ব্যবধান কমিয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে গেতাফে। তখন বার্সেলোনাকেও বলের দখল নিতে কিছুটা ভুগতে দেখা যায়।
শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ান আরাহো। অধিনায়কের অসাধারণ কর্নারে গোলমুখে লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান উরুগুয়ের ডিফেন্ডার।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের পাস দারুণ পজিশনে পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন মেসি। তার হ্যাটট্রিক হতে পারতো তারপরও।
পরের মিনিটেই ডি-বক্সে গ্রিজমান ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। কিন্তু মেসি সেটি না নিয়ে সুযোগ দেন গ্রিজমানকে। কোনো ভুল করেননি বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি তারকা।
৩১ ম্যাচে ২১ জয় ও পাঁচ ড্রয়ে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ফিরল বার্সেলোনা। একটি করে ম্যাচ বেশি খেলা রিয়াল ও আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট যথাক্রমে ৭০ ও ৭৩।
দিয়েগো সিমেওনের দলের চেয়ে বার্সেলোনা ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে। তবে একটি ম্যাচ কম খেলায় এবং তাদের সঙ্গে ফিরতি লেগ বাকি থাকায় শিরোপা ভাগ্য বার্সেলোনার হাতে। বাকি ম্যাচগুলো জিতলেই শিরোপা যাবে বার্সেলোনায়।
৩২ ম্যাচে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে নেমে গেছে সেভিয়া। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে ১৫ নম্বরে গেতাফে।