ক্যাটাগরি

ঘরবন্দি মানুষের অনলাইনে কেনাকাটায় ঝোঁক

নতুন এই ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় কাঁচাবাজারের ভিড় এড়াতে নগরবাসীদের অনেকই অনলাইনে অর্ডার করছেন মাছ-মাংসসহ নানা পণ্য। অনেকেই আবার তৈরি খাবারও অর্ডার দিচ্ছেন অনলাইনে।

তবে সময়মতো পণ্য পৌঁছে দেওয়া এবং পচনশীল দ্রব্য সরবরাহ করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে এ খাতের সেবাদাতাদের।

তারা বলছেন, পর্যাপ্ত ডেলিভারিম্যান না থাকা এবং পচনশীল পণ্যের যোগানে ঘাটতি হওয়ায় তারা সময়মতো পণ্য ক্রেতার দ্বারে পৌঁছে দিতে পারছে না।

বিদেশ থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মোহাম্মদপুরের ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় আর কেউ নেই। আমি হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। অনলাইন থেকেই বাজার করছি।

“পণ্য পেতে আগের চেয়ে সময় বেশি লাগছে ঠিকই। কিন্তু ওরাই বা কি করবে? এখন তো মানুষের চাহিদাও বেড়ে গেছে।”

নিত্যপণ্য ছাড়াও খাবারের অর্ডারও বেড়েছে অনলাইনে

নিত্যপণ্য ছাড়াও খাবারের অর্ডারও বেড়েছে অনলাইনে

সুপারশপ স্বপ্নের হেড অব কমিউনিকেশন (ভারপ্রাপ্ত) মাহাদী ফয়সাল বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অনলাইনে গ্রোসারি কেনাকাটার প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশেও কিন্তু এটা কম নয়, প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে এই কেনাকাটা।

“পেরিশেবল আইটমেগুলো ডেলিভারি করাটা একটু কঠিন। এটা দীর্ঘসময় রাখা যায় না। কিন্তু এই আইটেমগুলোরই চাহিদা বেশি। ডেলিভারি দিতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে। কারণ মানুষ কমে গেছে। আমি প্রয়োজনমত জনবল পাচ্ছি না।”

স্বপ্ন নিজেদের অনলাইন ছাড়াও আরও কিছু প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বলে জানান মাহাদী। একইসঙ্গে টেলিশপিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন বলেও জানান তিনি।

পণ্য হাতে পাওয়ার সময় নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মানিয়ে নিয়েছেন শান্তিনগরের গৃহিনী তাবাসসুম জেরিন।

তিনি বলেন, “আমি আগে খুব কমই অনলাইন থেকে বাজারের জিনিস কিনতাম। যেই প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতাম তারা সবসময়ই সময়মতো ডেলিভারি দিত। এখন তারা দিতে পারছে না। ৪-৫ দিন পরে ডেলিভারি দিচ্ছে। যদিও এই মহূর্তে কিছু করার নেই। তারপরও সময় হিসাব করেই এখন জিনিসের অর্ডার করছি।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

সেই সঙ্গে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি হয়ে পড়ে, যাকে বলা হচ্ছে ‘লকডাউন’ ।

সরকারি ভাষায় সেই ‍‘ছুটির’ মেয়াদ এরপর বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। রোববার নতুন করে ‍তৃতীয় দফায় লকডাউন আরও তিনদিন বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।

চাপ বেড়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহে অনলাইন শপগুলোকে পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। ‘অথবাডটকম’র ওয়েবসাইটের নোটিসই তার প্রমাণ

চাপ বেড়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহে অনলাইন শপগুলোকে পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। ‘অথবাডটকম’র ওয়েবসাইটের নোটিসই তার প্রমাণ

অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম অথবা ডটকমের হেড অব অপারেশনস উল্লাস হক বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্ডার আগের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে সময় নিচ্ছি।

“পণ্য আসার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। প্যাকেটজাত পণ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে না। মূলত কাঁচা পণ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাটা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সময় পাওয়া যায়নি। যেকারণে আমাদের কিছুটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগের চেয়ে অর্ডার বেশি হচ্ছে যেমন সেই তুলনায় ডেলিভারি করার লোক বাড়ানো যায়নি।”

তিনি বলেন, “ঢাকায় মানুষ যারা আছে, তারা অনেকেই নতুন করে অনলাইন মার্কেট প্লেসে অভ্যস্ত হচ্ছে।”

মিরপুরের বাসিন্দা শায়ান রহমান বলেন, “বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আগে খাবার অর্ডার করতাম এখনও করছি।  যদিও আগের থেকে অপশন কমে গেছে তবুও মোটামুটি পাওয়া যাচ্ছে।”