সোমবার
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের
প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা ওদের প্রসেস আছে। এটা আমাদের কমপ্লিট করতে হবে।
“এই দেশে প্রায় জিনিসেরই
দেয়ার আর মেনি প্রসেসেস… ওই কমিটির ওই লোকগুলোকে
সন্তুষ্ট করতে হবে… এটাতে সময় লাগবে। সুইচের মত না
যে এক দিনে অন আর অফ করতে পারবে।”
বাংলাদেশে অনেক কিছু ‘সহজে’
করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে করা যায় না মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “আমাদের দেশের
সরকার ইয়েস বললে ইয়েস হয়ে গেল। এখানে অনেক সময় চাইলেও পারে না।
“যেমন ট্যারিফ
প্রত্যাহারের জন্য ২৩টা কমিটিতে অনুমোদন লাগে। তারপর প্রেসিডেন্ট সেটার উপর
রেসপন্স দিতে পারেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট কিছু বলতে পারেন না। এখানে একজিকিউভের
যথেষ্ট আটকা, সে কারণে এটা সহজে বলতে পারবে না। আপনাকে প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে
হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের
আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের তরফ থেকে তোলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল র্যাবের ওপর থেকে
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ।
‘গুরুতর’ মানবাধিকার
লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ
বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর গত বছর ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
দিবসে ওই নিষেধাজ্ঞার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর
ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনেও এ বিষয়ে আলাপ হয় মোমেনের।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের
পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈঠকে র্যাব গঠন এবং নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী চার মাসে এ এলিট
ফোর্সের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন মোমেন।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন,
“আমি বললাম, র্যাবটা আমাদের দেশে এমন সময়ে তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের দেশে
সন্ত্রাস, জিহাদি- এগুলোর উৎপাত খুব বেশি ছিল।
“একদিনে ৪৯৫টা বোমাবাজি
হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে
২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন আহত হয়। সারাদেশে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল, ওই
সময়ে তৈরি হয়েছিল।”
র্যাব হয়ত কখনো কখনো
‘অতিরিক্ত বা বেশি কিছু করে’ ফেলেছে- এমন বক্তব্য বৈঠকে দেওয়ার কথা জানিয়ে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তবে ইনবিল্ট সিস্টেম আছে জবাবদিহিতার এবং অনেকের শাস্তি
হয়েছে। এমনকি লাইফ একজিকিউশনও হয়েছে। সুতরাং এখানে জবাবদিহিতা আছে।
“বলেছি, আপনাদের
রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টিই বলেছিলেন, র্যাব ইজ দ্য এফবিআই অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির
উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমার তরুণরা ওখানে কাজ করায় নিরুৎসাহিত হবে। আমি খুব খুশি
হব, আপনি যদি এটা পুনর্বিবেচনা করেন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্লিংকেন জবাবে কী বলেছেন, সে ধারণা দিয়ে মোমেন বলেন, “উনি বললেন যে, ‘এটার প্রসেস
আছে, সেই প্রসেসে হবে। তবে আমাদের জবাবদিহিতা দরকার। আমরা এ ব্যাপারে বেশ
সোচ্চার’।
“আমি বললাম, আমরা সব
ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তখন বললেন যে, ’গত চার মাসে কেউ মারা যায়নি’।
আর ডিএসএ-তেও আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড গুড। গত চার মাসে একজনও অ্যারেস্ট হয়নি। উনি
বললেন, ‘এটা ভালো’।”
আলোচনায় আরও যা কিছু
সোমবার
ওয়াশিংটন সময় দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয়ে পৌনে এক ঘণ্টা
মত চলে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক। বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
বলেন, “খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে।”
তিনি
জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, বাংলাদেশের
ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে
সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানো, রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম অধিকার এবং মানবাধিকারের
মত বিষয় আলোচনায় এসেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠির প্রেক্ষাপট তুলে
ধরে আলোচনা শুরু হয়। বাইডেন সেখানে বলেছেন, দুই দেশের গত ৫০ বছরের সম্পর্ক ‘অত্যন্ত
মধুর’।
“আগামী
৫০ বছরে আমাদের যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ক্লাইমেট ইস্যু, হিউম্যান রাইটস, শান্তিরক্ষা
মিশনে কাজ করার সুযোগ আছে,” বলেন মোমেন।
বাংলাদেশে
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ৯০ শতাংশই যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, সে বিষয়টি তুলে ধরে
তিনি বলেন, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে
আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
“আমি
বলেছি, আমাদের দেশে ‘ইজ অব বিজনেস’ খুব পুওর। তোমরা আমাদের সাহায্য কর না কেন?”
যুক্তরাষ্ট্রে
বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
বলেন, “আমরা বলেছি যে, এখানে ৫-৬ লাখ বাঙালি
থাকে, তারা দেশে যেতে চায়, বিমানটা যদি চালু করেন।
“আমরা সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি, আপনি এটাকে ত্বরান্বিত করেন।
৫০ বছর পূর্তিতে যদি এটা করতে পারি, আমরা খুবই খুশি হব।”
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান
জানানোর কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “বলেছি, আপনাদের পজিশন ভালো। আপনাদের আরও বেশি ভূমিকা
চাই।
“আমরা চাই, আপনারা আসিয়ান ও কোয়াড কান্ট্রিজকে ওদের সাথে দূরত্ব
বজায় রাখতে বলবেন। আমরা চাই, এর আগে তাদের ওপরে ২০১৬ সালের আগে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল,
ওইটা আবার আরোপ করেন। আপনি এখনো জিএসপি দিচ্ছেন মিয়ানমারকে, এটা গ্রহণযোগ্য না।”