এজন্য এক হাজার ৯০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।
শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে ওই সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “ফার্মাসিউটিক্যালসে আমাদের বিশাল সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়া- এই ধরনের অ্যাডভান্সড মার্কেটে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রডাক্ট যাচ্ছে।”
জাতিসংঘ শিশু সংগঠন ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিডিবিআরবির মত সংস্থা এসেনসিয়াল ড্রাগস থেকে ওষুধ কেনে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্বমানের ওষুধ তৈরির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানোও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।”
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ঢাকার সাত রাস্তা এলাকায় ৩ বিঘারও কম জায়গায় এ ওষুধ কারখানার কার্যক্রম চলছে। বর্তমান যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় ৬০ বছরের পুরনো।
“আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হলে বিশাল পরিসরের জায়গা প্রয়োজন হয়। তাই মানিকগঞ্জ সদরের মেঘশিমুল মৌজার প্রায় ৩১ দশমিক ৫ একর জমির ওপর সরকারের ওষুধ তৈরির প্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হবে।”
মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে একচেটিয়া বা দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি না পারে সেজন্য সরকার ১৯৮৫ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগস প্রতিষ্ঠা করে। পরে বগুড়া ও গোপালগঞ্জে সম্প্রসারণ করা হয় এ কোম্পানির শাখা।
সরকারি এ কোম্পানি থাকার ফলে বাজারে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ থাকে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “বিশেষ করে দেশের বাজারে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম নিয়ে যেন কারসাজি করতে না পারে তার জন্য এ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।”
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্প ব্যয়ের পুরো অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা হবে।
এদিন বৈঠকে মোট বার হাজার ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ হাজার ৯৯০ কোটি, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তার খাত থেকে ৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা যোগান দেওয়া হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া বাকি প্রকল্পগুলো
>> আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিটি গভর্নেন্স (ইউডিসিজি) প্রকল্প; ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
>> রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ; ব্যয় ৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
>> বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিাসর্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতয়ী পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ৪৪৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
>> সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস হোস্টল নির্মাণ/পুননির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
>> ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রোভমেন্ট ফর মুহুরি ইরিগেশন প্রকল্প; এ প্রকল্পটি থেকে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কমানো হয়েছে।
>> তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকুলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন, ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ (১ম পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
>> নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। ব্যয়; ২০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
>> কিশোরগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলায় নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ, ওয়েভ প্রটেকশন এবং খাল পুন খনন প্রকল্প; ব্যয় ৬৫৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
>> বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
>> ঢাকাস্থ ডেসকো এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প; ব্যয় ২ হাজার ২৭২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।