বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের হাব হিসেবে
বিবেচিত ওই সাইটটি। বিবিসি জানিয়েছে, এতে মাদক ও বেআইনি পণ্যের বিক্রি চলেছে ছয় বছরেরও
বেশি সময় ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওয়েবসাইটটির
সার্ভার জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে জার্মান পুলিশ।
ওয়েবসাইটটির সার্ভারে এক কোটি ৭০ লাখ ক্রেতা
এবং ১৯ হাজার বিক্রেতার অ্যাকাউন্ট নিবন্ধিত ছিল। সার্ভার জব্দ হওয়ার পর সাইটে এখন
ঝুলছে পুলিশের নোটিশ।
বিবিসি জানিয়েছে, ‘ডেড ড্রপ’ সেবা ছিল ‘হাইড্রা’র
মূল ব্যবসা কৌশলগুলোর একটি। এই কৌশলের অংশ হিসেবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কোনো স্থানে
মাদকের প্যাকেজ রেখে যায় বিক্রেতা। পরে ক্রেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে মাদকের প্যাকেজ
সংগ্রহ করতে হবে কোথা থেকে।
জার্মান পুলিশ সার্ভার জব্দ করার ঘোষণা দেওয়ার
পরপরই ‘হাইড্রা’র ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার
ঘোষণায় ‘হাইড্রা’-কে রাশিয়াভিত্তিক ওয়েবসাইট বলে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ছয় মাসে ডার্কনেটের অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস
বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে, এতদিন পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই ছিল হাইড্রা।
২০১৫ সালে চালু হওয়া ওয়েবসাইটটি মাদক, হ্যাকিংয়ের
মাধ্যমে বেহাত ডেটা, নকল নথিপত্র এবং ‘বিটকয়েন-মিক্সিং’-এর মতো অবৈধ ডিজিটাল সেবা দিতো। সাইবার অপরাধীদের মধ্যে জনপ্রিয় কৌশল বিটকয়েন-মিক্সিংয়ের
মাধ্যমে চোরাই ডিজিটাল মুদ্রা পাচার করতো সাইবার অপরাধীরা।
সাইটটির মূল ভাষা ছিল রাশিয়ান। বিক্রেতাদের
মধ্যে রাশিয়া, ইউক্রেইন, বেলারুশ, কাজাখস্তান এবং আশপাশের দেশের নাগরিকরা ছিলো বলে
জানিয়েছে বিবিসি।
জার্মান পুলিশ বাহিনীর সেবাস্তিয়ান জোয়াইবেল
বলেছেন, ওয়েবসাইটটির অবকাঠামো সম্ভবত জার্মানি থেকে হোস্ট করা হচ্ছে এমন ইঙ্গিত পাওয়ার
পরপরই অভিযানে নামেন তারা।
জোয়াইবেল বলেন, “ডার্কনেট কর্মকাণ্ডের উপর
নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম।
তাই আমরা গত বছরের জুলাই বা আগস্ট মাসে এ বিষয়ে তদন্ত করা শুরু করি।”
জার্মানির কোন প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটটিকে হোস্ট
করছে, সেটি চিহ্নিত করতেই তদন্তকারীদের কয়েক মাস সময় লেগেছে। তদন্তে শেষে তারা আবিষ্কার
করেন, ওয়েবসাইটটি হোস্ট করছে একটি ‘বুলেট-প্রুফ হোস্টিং’ কোম্পানি।
ওয়েবসাইটের কর্মকাণ্ড বা কনটেন্ট কখনোই যাচাই-বাছাই
করে দেখে না কথিত ‘বুলেট-প্রুফ হোস্টিং’ কোম্পানিগুলো। সাইবার অপরাধীদের ওয়েবসাইট হোস্ট
করতেও আপত্তি নেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর; পুলিশ গ্রাহকের তথ্য চাইলেও এড়িয়ে যায় তারা।
প্রমাণ সংগ্রহের পর সেটি নিয়ে এক জার্মান
বিচারকের কাছ থেকে সার্ভার কোম্পানিতে অভিযান চালানো এবং কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেওয়ার
অনুমতি সংগ্রহ করে জার্মান পুলিশ।
আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যথায়, তাদের গ্রেপ্তার করতে পারতো পুলিশ।
ওয়েবসাইটের সার্ভার জব্দ করার পর জার্মান
পুলিশ এতে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে, “এই প্ল্যাটফর্ম এবং এর অপরাধ সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট জব্দ
করা হয়েছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম ডার্কনেট মার্কেটপ্লেস বন্ধ
করতে পারলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না জার্মান পুলিশের কর্মকর্তারা। ওয়েবসাইটটির পেছনের
সাইবার অপরাধী দলটিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তারা আবার অনলাইনে ফিরবে
বলে আশঙ্কা করছের তারা।
“আমরা সবাই জানি যে, তারা ব্যবসা চালানোর
বিকল্প উপায় খুঁজে নেবে। তারা সম্ভবত নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবে এবং আমাদের
এর ওপর নজর রাখতে হবে। আমরা মূল হোতাকে এখনও চিনি না, তাই এটাই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ,”
বলেন জোয়াইবেল।
সময়টা ভালো যাচ্ছে না ডার্কনেটভিত্তিক মার্কেটপ্লেসগুলোর।
এই খাতের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ওয়েবসাইটগুলো গত কয়েক মাসে হয় পুলিশি অভিযানে বন্ধ হয়েছে
অথবা পরিচালকরা নিজ দায়িত্বে সাইট বন্ধ করে দিয়েছেন সাইটগুলো।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাইবার অপরাধীরা নিজের
ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে অর্জিত ধন-সম্পদ নিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জানুয়ারি মাসেই স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা
বলে নিজস্ব সেবা বন্ধ করে দিয়েছে চোরাই ক্রেডিট কার্ড তথ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইট ‘ইউনিসিসি’।
স্বেচ্ছায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ডার্কনেট মার্কেপ্লেসের তালিকায় আরও আছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে
বন্ধ হওয়া ‘হোয়াইট হাউজ মার্কেট’, নভেম্বরে বন্ধ হওয়া ‘ক্যানাজোন’ এবং ডিসেম্বর মাসে
বন্ধ হওয়া ‘টরেজ’ সাইটগুলো।