ক্যাটাগরি

ফরিদপুরে ওসির বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির মামলা

বুধবার ফরিদপুর বিচারিক
হাকিম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের মোবারকদিয়া
গ্রামের মৃত আব্দুল হক মোল্যার ছেলে ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান নান্টু।

মামলায় আসামিরা হলেন বোয়ালমারী
থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম (৫৫) ও এসআই উত্তম কুমার সেন (৫০)।

আদালত মামলাটি আমলে
নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি পরিচালনা করার দায়িত্ব
দিয়েছে বলে বাদীর আইনজীবী খন্দকার লুৎফর রহমান পিলু জানিয়েছেন।

মামলার নথি থেকে জানা
যায়, বাদী আতিয়ার রহমান নান্টু বোয়ালমারী পৌর সদরের ওয়াপদার মোড়ে ২০০০ সালে সাড়ে
১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন; পরে ২ শতাংশের উপর গুদাম ঘর করে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করে
আসছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তার সঙ্গে
জমিজমা নিয়ে সোতাশী গ্রামের মৃত মহিউদ্দীনের ছেলে মো. ইয়াকুব হোসেন ও মো. বেলায়েত
হোসেনের বিরোধ চলছিল। ওই দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক জমি ও ঘর দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা
করতে থাকায় আতিয়ার রহমান নান্টু ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর থানায় জিডি [নম্বর ১৯৭৭] করেন।

ওইদিনই ওসির কাছে অভিযোগ
দিলে ওসি নুরুল আলম বাদী নান্টুর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন উল্লেখ করে অভিযোগে
বলা হয়, তিনি (নান্টু) ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে ওসি এসআই উত্তম কুমার সেনকে
ঘটনাস্থলে পাঠান। তখন উত্তম কুমার সেন সেখানে গিয়ে ইয়াকুব হোসেন ও তার ভাই বেলায়েত
হোসেনকে নান্টুর জমি ও ঘরে যেতে নিষেধ করে আসেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর
চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ইয়াকুব ও বেলায়েত হোসেন লোকজন নিয়ে বাদীর গুদাম
ঘরের তালা ভেঙে সিমেন্টের বস্তা উঠানোর চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আতিয়ার রহমান
নান্টু থানায় গিয়ে ওসিকে বিষয়টি জানালে ওসি নুরুল আলম আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা
দাবি করেন এবং বলেন টাকা না দিলে ইয়াকুবদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে তাদের ঘরে
তুলে দিবেন।

টাকা দিতে অস্বীকার
করলে আতিয়ার রহমান নান্টুকে ওসি জীবননাশের হুমকি দেন এবং এস আই উত্তম কুমারকে দিয়ে
টেনে হেঁচড়ে থানা থেকে বের করে দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

ওসি বাদীর হাত-পা ভেঙে
দেওয়া এবং পেন্ডিং মামলায় দিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন উল্লেখ করে
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এরপর ইয়াকুবদের ওই ঘরে তুলে দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে
দেন ওসি।

এর প্রতিকার চেয়ে বাদী পুলিশ
সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বাদী আতিয়ার।

মামলার বাদী আতিয়ার
রহমান নান্টু বলেন, “আমার ক্রয়কৃত সাড়ে দশ শতাংশ জমি থেকে দুই শতাংশের উপর ঘর তুলে
আমি ২০ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। ইয়াকুবরা পুলিশের সহায়তায় অন্যায়ভাবে আমার ঘর
দখল করে নিয়েছে। ওসি সাবকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা
দিতে না পারায় ওদেরকে ঘরে তুলে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “পুলিশ
সুপারসহ বিভিন্ন যায়গায় অভিযোগ দিলে ওসি আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের মাধ্যমে
চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার তো টাকা না, ঘর দরকার। আমার ঘর, বিদ্যুতের মিটার,
ট্রেড লাইসেন্স সবকিছু আমার আছে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত মামলা করে দিলাম।”

বাদীর আইনজীবী খন্দকার
লুৎফর রহমান পিলু বলেন, “আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে বিধায় বোয়ালমারী
থানার ওসি মো. নুরুল আলম এবং এসআই উত্তম কুমার সেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।”

আদালত পুলিশ ব্যুরো অব
ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

বোয়ালমারী থানার ওসি মো.
নুরুল আলম বলেন, অভিযোগ দেওয়ার ও মামলা করার স্বাধীনতা মানুষের আছে। তবে যে
অভিযোগে মামলা করেছে সে অভিযোগ সত্য নয়।

“আমি বোয়ালমারীতে আছি;
নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। টাকার জন্য কাউকে হয়রানি করেছি এমন কোনো
রেকর্ড নেই। কেউ বলতেও পারবে না। এটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক, মিথ্যা মামলা।”

এ বিষয়ে ফরিদপুরে
পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, “ওই বিষয়টি আমরা আগে থেকেই তদন্ত করছি।
পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখছেন এবং পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি
যেহেতু মামলা করছেন, বিষয়টিকে অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।”

তিনি বলেন কোনো পুলিশ
সদস্য অপরাধ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে; কোনো ছাড় দেওয়া
হবে না।