বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মস্কো-সামারা ট্রেনে ভ্রমণের সময় এক ব্যক্তি মুরাতভকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
মুরাতভ বিবিসিকে বলেন, “আমার চোখ ভয়ঙ্করভাবে জ্বলছিল। হামলাকারী বলছিল, ‘মুরাতভ, আমাদের ছেলেদের জন্য (তোমাকে এই শাস্তি)’।”
৫৯ বছর বয়সী মুরাতভ দেশটির অনুসন্ধানী সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার প্রধান সম্পাদক। সংবাদপত্রটি বর্তমান রুশ সরকারের ব্যাপক সমালোচক হিসাবে পরিচিত।
চলমান ইউক্রেইন যুদ্ধের সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ক্রেমলিন বারবার সতর্ক করার পর সাময়িকভাবে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে নোভায় গেজেটা।
সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচেভের পর সাংবাদিক মুরাতভ হলেন প্রথম রুশ নাগরিক, যিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের স্বীকৃতিতে গত বছর তিনি ওই পুরস্কার পান।
দিমিত্রি মুরাতভ/বিবিসি
বৃহস্পতিবার মস্কো থেকে সামারায় যাওয়ার পথে ট্রেনে হামলার শিকার হলে ওই ঘটনার ছবি নোভায়া গেজেটার টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ পায়।
সেখানে দেখা যায়, নীল টিশার্ট পরিহিত মুরাতভের মাথা থেকে পুরো শরীরে রক্তের মত লাল রঙ ছড়িয়ে আছে।
আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, মুরাতভ ট্রেনের যে আসনে বসেছিলেন সেখানে তার টেবিল, জিনিসপত্র ও বসার জায়গা লাল রঙে মাখামাখি। ছুড়ে মারা তরল রঙ ট্রেনের জানালাতেও লেগে আছে।
গত মাসে নোভায়া গেজেটা ঘোষণা করেছে, ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণের কাজ তারা স্থগিত রাখবে। তবে রাশিয়ার বাইরে ভিন্ন ভাষায় তাদের কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেয়।
ইউক্রেইনের যুদ্ধকে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়ে রাশিয়ার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, দেশের সকল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডকে কেউ ‘যুদ্ধ’ হিসাবে বর্ণনা করলে তাকে মোটা জরিমানা বা বন্ধের মুখোমুখি হতে হবে।
বিবিসি লিখেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই রাশিয়ায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ তীব্র হয়েছে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, না হয় কার্যক্রম সীমিত করতে হয়েছে। ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার ব্যবহারও নিষিদ্ধ ররেছে।
ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে সরব হওয়ায় রাশিয়ার কিছু মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই যারা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের জীবন রাশিয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাশিয়ায় ‘ভুয়া’ তথ্য ছড়ালে ১৫ বছর জেল হতে পারে এমন আইনও করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের বিরোধিতাকে ‘দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন।