ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে শুক্রবার গাজী গ্রুপের জয় ৪ রানে। শেষ জুটিতে শেষ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের দরকার ছিল ৭ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে পেসার আশিকুর জামান দেন স্রেফ ২ রান।
গাজী গ্রুপের জয়ের নায়ক যদিও বোলারদের কেউ নয়। ব্যাট হাতে দলকে প্রায় একাই টেনে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেন মেহেদি মারুফ। ১৪০ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই।
অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা এনামুল হক ও অভিমন্যু ইশ্বরনের ফিফটিতে একটা সময় সহজ জয়ের পথে ছিল প্রাইম বাংক। কিন্তু এই দুজনের বিদায়ের পরই পথ হারায় তারা।
এনামুল এবার ১০০ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ৮৫ রানের ইনিংস। লিগে ৯ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে তার রান এখন ৭২৮! ১৬১ ম্যাচের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এদিন প্রথমবার বল হাতে নিয়ে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে একটি উইকেটও নেন তিনি।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরু করেন গাজী গ্রুপের দুই ওপেনার মারুফ ও মাহমুদুল হাসান। নবম ওভারে মাহমুদুলকে বোল্ড করে ৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন।
তিন নম্বরে নেমে টিকতে পারেননি ফরহাদ হোসেন। তৃতীয় উইকেটে আল আমিন জুনিয়রের সঙ্গে ৮৩ বলে ৮২ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মারুফ।
আল আমিনের (৪৪ বলে ৩৫) বিদায়ে এই জুটি ভাঙার পর নিয়মিত উইকেট হারায় গাজী গ্রুপ। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানেন মারুফ।
ডানহাতি ওপেনার ৭১ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ১২১ বলে। আসরে এটি তার প্রথম ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সপ্তম সেঞ্চুরি। ৪৬তম ওভারে তার ইনিংস থামে রেজাউর রহমান রাজার বলে রুবেলকে ক্যাচ দিয়ে।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে রেজাউর সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে রান দেন ৭৮। ৩৯ রানে রুবেলের প্রাপ্তি ২টি।
রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম ওভারেই এনামুল দুটি ছক্কা মারেন আশিকুরকে। অষ্টম ওভারে প্রাইম ব্যাংকের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। ওই ওভারেই শাহাদাত হোসেন (২২) স্টাম্পড হয়ে ফিরলে ভাঙে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এনামুল এরপর ইশ্বরনের সঙ্গে গড়ে তোলেন বড় জুটি। ফিফটি তুলে নেন তিনি ৫৪ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে ইশ্বরনের লাগে ৬০ বল। দুই জনের জুটির রান একশ স্পর্শ করে ১২০ বলে।
প্রাইম ব্যাংকের জয়টা তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু একই ওভারে অফ স্পিনার মাহমুদুলের তিন বলের মধ্যে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পরই পাল্টে যায় চিত্র। ৭১ বলে ৫৬ রান করা ইশ্বরন বোল্ড হওয়ার পর এনামুল হন এলবিডব্লিউ।
হুসনা হাবিবের স্টাম্পের বলে ব্যাক ফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন মোহাম্মদ মিঠুন। পরে বাঁহাতি এই স্পিনারের বলেই লেগ সাইডে খেলার চেষ্টা বোল্ড হন নাসির হোসেন। দ্রুত মেহেদি হাসান বিদায় নেন স্টাম্পড হয়ে।
দলকে টানছিলেন নাহিদুল ইসলাম। তার ৩৪ রানের ইনিংস শেষ হয় ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের পরের বলেই বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দেন অলক কাপালী।
৪৮তম ওভারে রেজাউর রহমান নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন রান আউটে কাটা পড়েন, তখন প্রাইম ব্যাংকের দরকার ১৫ বলে ১৭ রান।
মনির হোসেন চেষ্টা করেন তবু, কিন্তু ইনিংসের শেষ ৪ বলে স্ট্রাইক পাননি তিনি। এই ৪ বলের তিনটিতে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি রুবেল! জয়ের উল্লাসে মাতে গাজী গ্রুপ।
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রকিবুল ও হাবিব নেন ৩টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ২৫৬/৯ (মারুফ ১১৮, মাহমুদুল ৯, ফরহাদ ১০, আল আমিন ৩৫, গুরিন্দার ৫, আকবর ৫, জুবারুল ১৮, অনিক ৯, আশিকুর ৯, হাবিব ১০*, রকিবুল ২*; রুবেল ১০-১-৩৯-২, রকিবুল ৭-০-২১-০, রেজাউর ১০-০-৭৮-৩, মেহেদি ৬-০-২৫-১, এনামুল ৪-০-২৬-১, অলক ১০-০-৫০-১, মনির ৩-০-৭-০)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫২/৯ (এনামুল ৮৫, শাহাদাত ২২, ইশ্বরন ৫৭, মিঠুন ৮, নাসির ১৫, নাহিদুল ৩৪, মেহেদি ৬, অলক ৩, মনির ১৪*, রেজাউর ১, রুবেল ২*, আশিকুর ৮-০-৩৮-০, হাবিব ১০-১-৩৯-৩, গুরিন্দার ১০-০-৬৮-০, অনিক ৭-০-৪০-০, রকিবুল ১০-০-৪২-৩, মাহমুদুল ৫-০-২৩-২)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি মারুফ