ক্যাটাগরি

হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চেয়ে শাহবাগে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

শুক্রবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সমাবেশে কবিতা ও গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি হৃদয়ের মুক্তির দাবি জানানো হয়।

গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে এবং শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।

সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করেন এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।

ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ মার্চ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

উদীচীর সমাবেশে নাট্যকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, “অপরাধটি করেছেন প্রধান শিক্ষক। উনি ইলেক্ট্রিশিয়ানকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। ছাত্ররা তো ক্লাসে মোবাইল ফোন নিয়ে ক্লাসে যাওয়ার নিয়ম নেই।

“প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের বিচার না করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। হৃদয় মণ্ডল একটি বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের বলে এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।”

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জামিন চেয়ে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে এবং পরে দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। কিন্তু জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যায়। আগামী রোববার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, “যুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান পড়ানোর কারণে যদি কোনো শিক্ষককে জেলখানায় যেতে হয়, তাহলে এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।

“আমাদের প্রত্যাশা ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু এই শাসকগোষ্ঠী এই দেশটিকে এমন স্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ধর্মের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে এখানে মুক্তবুদ্ধি চাপাতির খড়গের নিচে।”


শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে চলছে?’


মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন


বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনও কেন বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল আটক অবস্থায় আছে? তার কী অপরাধ, সেটা আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই। যদি কোনো অপরাধ না থাকে, তাহলে এটির পিছনে কারা আছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হোক।”

বিজ্ঞান শিক্ষককে যে ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে তা শুধু একজন ‘মৌলবাদীর মাথা থেকে’ আসতে পারে মন্তব্য করে উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, “তিনি যে কথা বলেছেন, সেই রেকর্ডে দেখা গেল- তিনি কোথাও ধর্মের অবমাননা করেননি।

“তিনি বলতে চেয়েছেন, বিজ্ঞান প্রমাণের বিষয় আর ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। এখানে শুধু তার নামের কারণে তাকে ভিক্টিম হতে হয়েছে।”

গেল কয়েক বছরে বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “এই সরকার আসার পরে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষফোঁড়াকে আরও সামনে নিয়ে আসছে হেফাজতের দাবিকে মেনে নিয়ে।

“পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই আজকে সমাজে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

সমাবেশে উদীচী সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা, প্রগতিশীল লেখক সংঘের সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কৃষক সমিতির নেতা কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন উপস্থিত ছিলেন।