বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি সংগঠন- সাহিত্য বিষয়ক সংগঠন ‘সাস্ট সাহিত্য সংসদ’, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন ‘ক্যামসাস্ট’ ও বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন ‘সায়েন্স এরেনা’ শনিবার দুপুর আড়াইটায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপু, সাস্ট সাহিত্য সংসদের কোষাধ্যক্ষ ও জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনা।
হৃদয় মণ্ডল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক। ২২ বছর ধরে ওই স্কুলে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন তিনি।
গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির এক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের আলাদা হওয়ার কথা বলেন তিনি। ওই ক্লাসের কয়েক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য রেকর্ড করে। সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হলে শুরু হয় আলোচনা।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত আবেদন দেয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় একদল লোক বিক্ষোভও করে এলাকায়। তখন পুলিশ গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদয় মণ্ডলকে তার বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায়। তাকে চাকরি থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ওই রাতেই ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রিশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করলে তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন হৃদয়, তা নাকচ করা হয়। এরপর সোমবার তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবার আবেদন করলেও জামিন হয়নি।
হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চেয়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ ছাড়া হৃদয়ের মুক্তি চেয়েছে দেশের বিভিন্ন সুশীল সমাজ, সংস্কৃতিকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবী মানুষ।
হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবি করে শাবির ওই মানববন্ধনে অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, “আমরা দেখছি, একজন শিক্ষককে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষক নয়, আমরা দেখছি দেশে এক ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সরকার দাবি করে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার সরকার, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার; কিন্তু সরকারি মহলের অনেকের বক্তব্য আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
“আমরা চাই, বাংলাদেশের সব মানুষ সমঅধিকারের ভিত্তিতে বসবাস করবে। আমরা চাই, এখানে সবাই তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবে।“
তিনি বলেন, “আমরা অডিওতে যা শুনতে পারি, বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা ঘটানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে- আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবি করছি।“
শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনা বলেন, “একজন শিক্ষক ক্লাস করাচ্ছেন, সেই ক্লাস লেকচার রেকর্ড করে, তার ওপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে তাকে মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন শিক্ষক কথা বলার সময় ভাবতে হবে যে, তিনি কি কথা বলবেন? কিন্তু আমাদের শিক্ষা তো এরকম হওয়া উচিত ছিল না।”
“আমাদের একাডেমিক ফ্রিডম বলে একটা কথা আছে; যেখানে শিক্ষক হবেন মুক্ত, যে আমাদের মনে প্রশ্ন করার উদ্দীপনা জাগাবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের কোনো শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকের ওপর এমন জোর-জবরদস্তিমূলক হয়রানি মানি না। শুধু শিক্ষাঙ্গনে না; দেশের কোনো জায়গায় কোনো মানুষের মুক্তচিন্তার কিংবা মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার আছে।”
হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবি করে লুবনা বলেন, “এখানে হৃদয় মণ্ডল স্যার শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন বলে, নেহায়েত সেই প্রশ্নের উত্তর রেকর্ড করে, সেটার ওপর মামলা করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি; সঙ্গে শিক্ষককে এরকম হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তির দাবি করছি।“
শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপু শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নামে মামলা, গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার মুক্তির দাবি জানান।
আরও পড়ুন
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে চলছে?’
জজ আদালতেও জামিন মেলেনি বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের
‘ফাঁসানো হয়েছে’, অভিযোগ হৃদয় মণ্ডলের পরিবারের
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি
সম্পাদকের সুর বদল, হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চাইল ঢাবি শিক্ষক সমিতি
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে নিয়ে মন্তব্য: সমালোচনার মুখে ঢাবির শিক্ষক নেতা বললেন, তিনি ‘প্রগতির পক্ষে’