পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী সবসময় বড় খেলোয়াড়। কখনো সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে, কখনো বরখাস্ত করে বা কখনো সামরিক আইন জারি করে বার বার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহম্মদ আলী বা পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত কেউ কেউ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন।
সেনাবাহিনীর মত পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপেও দেশটির কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্যবদল হয়েছে, ছাড়তে হয়েছে ক্ষমতা। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট।
পাকিস্তানের সব থেকে দুর্ভাগা প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত নওয়াজ শরিফ। তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেও একবারও মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট তাকে বরখাস্ত করেন, দ্বিতীয়বার সামরিক আইন জারি হয় এবং তৃতীয়বার সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে।
তবে ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাকে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিতে হল।
এবারের দৃশ্যপটে মূল খেলোয়াড়দের একজন নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ। গত ২৮ মার্চ পাকিস্তানের বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
নানা নাটকীয়তার পর শনিবার মধ্যরাতে সেই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। তাতে ৩৪২ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৭৪ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, নিশ্চিত হয় ইমরানের বিদায়।
এই আস্থা ভোট ঠেকাতে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিলেন ইমরান। গত ৩ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। ইমরানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ওই দুই সিদ্ধান্ত অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে শনিবার অধিবেশন পুনরুজ্জীবিত করে ভোটাভুটির নির্দেশ দিলে লজ্জানক প্রস্থান এড়ানোর পথ বন্ধ হয়ে যায় ইমরান খানের জন্য।
পাকিস্তান: অনেক নাটকের পর আস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান
ইমরান খান: ক্রিকেট মাঠ থেকে পাকিস্তানের মসনদে
নামকরা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতির মাঠের পাকা খেলোয়াড় বনে যাওয়া ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ২২ জন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে। তাদের মধ্যে একজন নারী প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন, তিনি হলেন বেনজির ভুট্টো।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। তিন বছর আট মাস দায়িত্ব পালনের পর তার সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা আসেন বেনজির। সেবারও তিন বছর ১৭ দিন দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বারও তার সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।