পার্লামেন্টে নিজের দল
তেহরিক-ই-ইনসাফ-পিটিআইর
সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর বিষয়টি যখন নিশ্চিত,
তখন অসম্মানের
বিদায় এড়াতে
এক কৌশল
নিয়েছিলেন ইমরান খান।
তার দলীয় নেতা
ডেপুটি স্পিকার
কাসিম সুরি
গত ৩
এপ্রিল বিরোধীদের
আনা সেই
অনাস্থা প্রস্তাব
প্রথমে খারিজ
করে দেন। আর এরপরই ইমরানের
পরামর্শে প্রেসিডেন্ট
আরিফ আলভি
বিলুপ্ত করেন
জাতীয় পরিষদ
বা পার্লামেন্ট।
কিন্তু ইমরানের ছক
উল্টে দেয়
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্ত
অবৈধ ঘোষণা
করে অনাস্থা
ভোট আয়োজন
করতে নির্দেশ
দেওয়া হয়
স্পিকারকে।
সেই আদেশের কারণে
অনাস্থা ভোট
হল এবং
তাতে হেরে
ইমরানের প্রধানমন্ত্রীত্বের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটল।
অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের
পর প্রায়
এক মাস
ধরে বিভিন্ন
ধাপ, প্রক্রিয়ার
উপর নজর
রেখেছিল পাকিস্তানের
দৈনিক দ্য
নিউজ।
নভোম্বর ২৮, ২০২১:
জাতীয় পরিষদে
পিপিপি নেতা
খুরশীদ শাহ
সংসদীয় ক্ষমতার
পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী
ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত
করতে বিরোধীরা
সংখ্যায় যথেষ্ট
থাকবে।
ডিসেম্বর ২৪, ২০২১:
দেশটির রাজনৈতিক
দল পিএমএল-এন নেতা
আয়াজ সাদিকও
বলেন, ক্ষমতার
পরিবর্তন আনতে
বিরোধীরা প্রস্তুতি
নিচ্ছে।
জানুয়ারি ১১, ২০২২: পিএমএল-এন নেতা
খাজা আসিফ
সরাসরিই বলেন,
সংসদীয় পরিবর্তনে
সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা
হারাতে যাচ্ছে।
জানুয়ারি ১৮, ২০২২:
পিপিপি চেয়ারম্যান
বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেন,
সিনেট চেয়ারম্যানের
বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাব সরকারকে
ক্ষমতাচ্যুত করবে না। বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে গদি থেকে সরিয়ে বাড়ি
পাঠাতে চায়।
জানুয়রি ২১, ২০২২:
পিএমএল-এন
নেতা আয়াজ
সাদিকও জানিয়ে
দেন, বিরোধী
শিবির প্রধানমন্ত্রীর
বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত। শুধু সেই সময়টি
কখন সেটি
পরে সিদ্ধান্ত
হবে।
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে
আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করে এক
সময়ের দুই
প্রতিপক্ষ দল পিপিপি ও পিএমএল-এন। পিএমএল-এন
সভাপতি শাহবাজ
শরিফ বলে,
দলের সর্বোচ্চ
নেতা নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে
তার দল
এই পদক্ষেপ
নিতে প্রস্তুত
ছিলই। এর পরিপ্রেক্ষিতে
এই দুই
বিরোধী দল
সরকারের শরিক
দলগুলোর সঙ্গে
যোগাযোগ শুরু
করে।
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২:
ইমরান নেতৃত্বাধীন
জোট সরকারের
বড় শরীক
দল মুত্তাহিদা
কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম)
এর কাছে
শাহবাজ শরিফ
বিকল্প প্রস্তাব
রাখেন।
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২:
বিরোধী দলগুলোর
পক্ষ থেকে
পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) শীর্ষ
নেতা মাওলানা
ফজলুর রেহমান
প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা প্রস্তাব আনার
ঘোষণা দেন।
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ
কোরেইশি বলেন,
সরকার অনাস্থা
প্রস্তাবকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে।
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশীদ সরকার উৎখাতে বিরোধীদের
তাদের শিবিরে
১৭২ জন
পার্লামেন্ট সদস্য জড়ো করার চ্যালেঞ্জ
ছুড়ে বসেন।
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২:
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খট্টক
নিশ্চিত ছিলেন,
পার্লামেন্ট সদস্যদের মানানো অতটা সহজ
নয়, তাই
অনাস্থা প্রস্তাবও
শেষ পর্যন্ত
আনা হবে
না। ইমরানের মন্ত্রীদের
বক্তব্য বিবেচনা
করলে বোঝা
যায় তার
সরকার অনাস্থা প্রস্তাবকে গুরুত্বের
সঙ্গে নেয়নি।
মার্চ ৮, ২০২২:
বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের
বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাব পেশ
করেই ফেলে।
মার্চ ৯, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পিপিপি
চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি তার
পরবর্তী লক্ষ্য
এবং তিনি
চান বিরোধীরা
তার বিরুদ্ধে
অনাস্থা প্রস্তাব
পেশ করুক।
মার্চ ১০, ২০২২:
ছেলে বিলওয়াল
তার বাবা
আসিফ আলী
জারদারির প্রতি
হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় ইমরানকে তার পরিণতির
জন্য প্রস্তুত
হতে বলেন।
মার্চ ১০, ২০২২:
একই দিনে
তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সশস্ত্র
বাহিনী সরকারের
সঙ্গে আছে।
মার্চ ১০, ২০২২:
ইসলামাবাদ পুলিশ জাতীয় পরিষদের লজের
ভেতরে অভিযান
চালায় এবং
দুই এমপিকে
গ্রেপ্তার করে।
মার্চ ১১, ২০২২:
ইমরানবিরোধী জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম
(জেইউআই-এফ)
নেতা-কর্মীদের
মুক্তির পর
কট্টরপন্থি এই দলের শীর্ষ নেতা
ফজলুর রহমান
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
প্রত্যাহার করেন।
মার্চ ১১, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিরোধী তিন
বড় নেতা
ফজল, জারদারি
ও শাহবাজের
বিরুদ্ধে তীব্র
সমালোচনায় নামেন।
মার্চ ১৩, ২০২২:
জোট সরকারের
প্রধান মিত্র
দল এমকিউএম-পি জানায়,
অনাস্থা প্রস্তাবের
সমস্ত বিকল্প
উন্মুক্ত রাখা
হচ্ছে।
মার্চ ১৪, ২০২২:
‘বৃহত্তর’ স্বার্থে
একসঙ্গে কাজ
করার সিদ্ধান্তে
একটি চুক্তিতে
পৌঁছায় পিপিপি
ও এমকিউএম-পি।
মার্চ ১৫, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, জাতি
‘তিন কট্টর’কে সমর্থন
করার পরিবর্তে
তার সঙ্গে
থাকতে প্রস্তুত।
মার্চ ১৬, ২০২২:
পাঞ্জাব আইন
পরিষদের স্পিকার পারভেজ এলাহী
দাবি করেন,
১০ থেকে
১২ জন
সরকারি আইন
প্রণেতা ‘নিরাপদ
হেফাজতে’ আছেন।
মার্চ ১৮, ২০২২:
পিটিআইয়ের ২৪ জন সদস্য সিন্ধু
হাউসে আছেন,
এটি জানাজানির
পর তাদের
কাছে কারণ
দর্শানোর নোটিস
যায়।
মার্চ ২১, ২০২২:
সরকার সুপ্রিম
কোর্টে ৬৩
(এ) ধারা
ব্যাখ্যার জন্য একটি রেফারেন্স ফাইল
করে।
মার্চ ২৭, ২০২২:
পিটিআইর সমাবেশে
ইমরান খান
দাবি করেন,
তাকে ক্ষমতাচ্যুত
করতে বিদেশি
অর্থায়নের ষড়যন্ত্রে বিরোধীরা অনাস্থার পদক্ষেপ
নিয়েছে।
মার্চ ২৮, ২০২২:
জাতীয় পরিষদে
বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের
বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাব পেশ
করেন।
মার্চ ২৮, ২০২২:
বেলুচিস্তান থেকে স্বতন্ত্র সদস্য মোহাম্মদ
আসলাম ভুটানি
ক্ষমতাসীনদের জোট ছাড়েন এবং বিরোধী
দলে যোগ
দেন।
মার্চ ৩০, ২০২২:
এমকিউএম-পি
সরকার ছাড়ার
ঘোষণা দিলে
পিটিআই জাতীয়
পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা
হারায়।
মার্চ ৩১, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা
প্রস্তাবের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন
৩ এপ্রিল
পর্যন্ত মুলতবি
হয়। ইমরান খান
তার বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ
আনে।
এপ্রিল ১, ২০২২:
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং
হোয়াইট হাউস
একসঙ্গে ইমরানের
আনা অভিযোগ
প্রত্যাখ্যান করে।
এপ্রিল ১, ২০২২:
ইমরান খান
‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’
বিরু্দ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য তরুণদের
এক হওয়ার
আহ্বান জানান।
এপ্রিল ৩, ২০২২:
জাতীয় পরিষদের
ডেপুটি স্পিকার
কাসিম সুরি
অনাস্থা প্রস্তাবকে
‘অসাংবিধানিক’
আখ্যা দিয়ে
খারিজ করে
দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর
পরামর্শে জাতীয়
পরিষদ ভেঙে
দেন রাষ্ট্রপতি
আরিফ আলভি। ফলে মন্ত্রিসভাও বিলুপ্ত
হয়ে যায়। ঘটনা দেখে হস্তক্ষেপ
করে সুপ্রিম
কোর্ট।
এপ্রিল ৭, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব
খারিজ করে
জাতীয় পরিষদের
ডেপুটি স্পিকার
কাসিম সুরির
সিদ্ধান্তকে সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করে
জাতীয় পরিষদ
পুনর্বহাল করে সর্বোচ্চ আদালত। অনাস্থা প্রস্তাবের
উপর ভোটাভুটির
জন্য স্পিকার
আসাদ কাইসারকে
অধিবেশন ডাকার
নির্দেশ দেওয়া
হয়।
এপ্রিল ৮, ২০২২:
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘আমদানি
করা সরকার’কে মানবেন
না তিনি, এমন
কিছু ঘটলে
জনগণের সমর্থনের
জন্য তাদের
কাছেই ফিরে
যাবেন।