ক্যাটাগরি

সেবা না পেয়ে ঢাবি মেডিকেল সেন্টারে অনশনে শিক্ষার্থী

শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি মেডিকেল সেন্টার থেকেই ফেইসবুকে এ অনশনের ঘোষণা দেন।

রোববার দুপুরে রনির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সেখানে অনশন শুরু করেছেন তার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রাহাত।

রোববার বিকালে মহিউদ্দিন রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনশন চলছে। খাবার ও ঔষধপত্র সব ছেড়ে দিয়েছি। আমার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ৬ দফা দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। আমি আর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করব। এরপর আমরণ অনশন ঘোষণা করব।”

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাম পা এবং কোমরে আঘাত পেয়ে গেল ৫ এপ্রিল থেকে এ মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছেন রনি।

যথাযথ  চিকিৎসা ও সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সেখানকার ভোগান্তি, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে পোস্ট করেন।

ভিডিওতে তিনি বলেন, “সেন্টারে আসার পর থেকে কোনো চিকিৎসক বা পরিচর্যাকারীর দেখা মিলছে না। স্ট্রেচার, হুইলচেয়ার নেই। স্যালাইন স্ট্যান্ডই ভরসা। এখানে টয়লেটে কোনো হাই কমোড নেই। মশারির কোনো ব্যবস্থা নেই। কাঁদলে বা কাতরালেও ওয়ার্ডবয়ের দেখা মেলে না। এখানে সবাই নবাব হয়ে গেছে।”

ভিডিও বার্তা দেখে তার হলের প্রভোস্ট, পরিবারের সদস্য এবং হলের বন্ধু-বান্ধবরা রনিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি মেডিকেল সেন্টারেই অনশনের সিদ্ধান্ত নেন।

তার ৬ দফা

১. মেডিকেল সেন্টারের এন্ট্রি পয়েন্টে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করতে হবে।

২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র‍্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিতে হবে।

৩. ছাত্রীদের অন্তর্বর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সব চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা দিতে হবে।

৪. অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বা মেশিন স্থাপন করতে হবে।

৫. অতিদ্রুত মেডিকেল সেন্টারে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

৬. অতিদ্রুত হাইকমোড, তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করতে হবে।

মহিউদ্দিন রনির বাড়ি বরিশালে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টারে ভর্তি হন তিনি।

তিনি বলেন, “আমার বাবার এত পয়সা নেই যে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী আছে, যাদের টাকা-পয়সার অভাব আছে। আর মেডিকেল সেন্টারটি আমাদের চিকিৎসার জন্যই করা হয়েছে, তাহলে এ সেন্টারের এত বেহাল থাকবে কেন?

“এখানে ভর্তি না হলে এ সেন্টারের বেহাল অবস্থাটা বুঝতে পারতাম না। তাই এ সেন্টারের সেবার মান উন্নয়ন না হলে আমি আমার পা–টাকে স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি আমরণ অনশন চালিয়ে যাব। যদি এখান থেকে আমাকে বের করতে হয়, তবে আমার লাশ বের করতে হবে। আমি কোনোভাবেই এখান থেকে সরব না।”

রনি তার ফেইসবুক পোস্টে প্রশ্ন রেখেছেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০০ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ফি জমা না দিয়ে পরীক্ষার হলে বসতে পারে না, পরীক্ষা দিতে পারে না। … ১০০ বছর পরেও কিছুই নেই, আমাদের কিছু করার নেই, এই কথাগুলো কেন শুনব আমরা?”

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তারা খুব একটা না গেলেও আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য যেতে হয়।

মেডিকেল সেন্টারের অব্যবস্থাপনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রণীত ‘মাস্টার প্ল্যান’ এ মেডিকেল সেন্টারটি আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে।

মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামান, বর্তমানে যে মেডিকেল সেন্টারটি আছে, এটা মূলত আউটডোর সিস্টেম। এখানে মূলত ভর্তি করা হয় আইসোলেশনের জন্য। করোনাভাইরাসের সময়, ডেঙ্গুর  সময়, চিকেন ফক্সের সময় সেবা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে  চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মেডিকেল সেন্টারের তিন তলায় যে ইনডোরটা আছে, সেটা আসলে গতানুগতিক হাসপাতালের যে ইনডোর, সেগুলোর মতো না। এটা আসলে আইসোলেশন সেন্টার। ডাক্তাররা নিয়মিত রাউন্ড দিয়ে সেখানে চিকিৎসা দেবে- সেরকম না। আমাদের এখানে যখন যে ভর্তি থাকে, তার রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী ডাক্তাররা গিয়ে সেবা দিয়ে আসেন। তারা অধিকাংশই আমাদের অধীনে থাকেন না।  বেশির ভাগ ঢাকা মেডিকেলের অধীনে। এই ছেলেটাও তাই।

“তার পরও আমি ওকে বলে আসছি, রিলেভেন্ট যত সুযোগ-সুবিধা আছে আমরা দেব। ওর হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওর অনেক দাবি-দাওয়া। এগুলো সব তো আমাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। শুক্রবার বিকেলে গিয়ে আমি তার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। ওর দিকে খেয়াল রাখতে আমি চিকিৎসকদের নোটিস দিয়ে দিয়েছি।”

অসহায়ত্বের সুরে ডা. হাফেজা বলেন, “শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ওর কাছে আমি রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগে সে অনশন শুরু করে দিয়েছে। আমি আজকে বিষয়টি নিয়ে ভিসি, প্রো-ভিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি।

“হাই কমোডের জন্য আমি সরাসরি ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে এটা দ্রুত হয়। আমার পক্ষে যা যা করার সম্ভব আমি তা করছি, এর বেশি কিছু আমি কী করব আর?”

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।