ক্যাটাগরি

চীনের মতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতে হবে: ফখরুল

নিজের এক সময়ের রাজনৈতিক গুরু মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একটি বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশের অনুষ্ঠানে রোববার বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “চীনের মতো একটা বিপ্লব আমাদের ঘটিয়ে ফেলতে হবে।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত ভাসানীর গ্রন্থ ‘মাও সে-তুঙ এর দেশে’র নতুন সংস্করণ প্রকাশের এই অনুষ্ঠানটি হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। ‘শোভা প্রকাশনী’র এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার।

ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের মুক্তির একটাই মাত্র পথ সামনে খোলা যে- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তারও পূর্বে যাদের অবদান আছে তাদেরকে স্মরণ করে, তাদের পথে গিয়ে আমাদেরকে একটা ঘটনা (বিপ্লব) ঘটাতে হবে।”

সেই সঙ্গে নিজের এখনকার রাজনৈতিক অবস্থানও ফুটে ওঠে তার বক্তব্যের পরের অংশে, যেখানে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোই তার এখনকার লক্ষ্যের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।

“আমরা জানি যে, সেটা হয়ত সমস্ত মানুষের যে মুক্তি, সেই মুক্তির পথ হবে না। কিন্তু জাতীয় মুক্তির পথ খুলতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতার জন্যে, জনগণের অধিকারকে বাস্তবায়িত করবার জন্য, আমরা সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন একটা অভ্যুত্থানের সৃষ্টি করি, যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের মুক্তি অর্জন করতে পারব, দেশের মানুষের মুক্তি অর্জন করতে পারব।” 

আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ড. আকবর আলি খান, তিনি কিন্তু বিএনপি করেন না। গতকাল তিনি বলেছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা শুধু উনার কথা নয়, এটা অনেকেরই কথা। আজকে পাকিস্তানে এত টারমোয়েলের পরেও দেখেন ওখানে নির্বাচন হবে। কার অধীনে হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে। এই বিষয়গুলোকে বুঝে আমাদের সামনে এগুতে হবে।”

‘নেতা’ এখন তারেক রহমান

২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীন সফরের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “ওই সফরে আমাদের সঙ্গে তারেক রহমান সাহেবও ছিলেন। গ্রেট হলের অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনার দেওয়ার পরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় পর্বে চাইনিজ প্রাইম মিনিস্টারকে নিয়ে ম্যাডাম যখন একেক করে এগুচ্ছেন।

“আমার পাশেই ছিলেন আমান উল্লাহ (আমান) সাহেব; তার পাশেই ছিলেন তারেক রহমান সাহেব, যিনি এখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার‌ম্যান। ম্যাডাম যখন বললেন, ‘হি ইজ মাই সান’। তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে হাত ছাড়তেই বললেন, ‘ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার অ্যান্ড মাদার’। এই কথাটা আমি ভুলতে পারি না।

“এখন বাংলাদেশের গোটা জাতি বলছে, তারেক রহমানকে বলছে, ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার অ্যান্ড মাদার। জিয়াউর রহমান সাহেব যে আদর্শ দিয়ে গেছেন এবং তার যে দর্শন, সেটাকে বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাকে বহন করে নিয়ে গেছেন। এটা এখন সেই পতাকা তুলে দেওয়ার দায়িত্ব এসেছে তারেক রহমান সাহেবের ওপরে এবং সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তিনি, তা পালন করতে সক্ষম হবেন।”

‘মেগা প্রকল্পে লুটপাট’

দেশের মেগা প্রকল্পগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে একটি পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হচ্ছে- ‘তরল গ্যাসে গরল হিসাব’। পড়েন রিপোর্টের ভেতরটা, লোম শিউরে উঠবে যে এত হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে বের করে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

“ইতিমধ্যে ১১ হাজার ৬শ ১০ কোটি টাকা গন। প্রজেক্টটি হচ্ছে- মহেশখালী ভাসমান এলএমএনজি টার্মিনাল। এভাবে প্রত্যেকটা… অল দিস প্রজেক্টস। একটা একটা করে প্রজেক্ট যদি ধরেন, দেখবেন যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটা ভয়াবহ অবস্থা।”

পাঠ্যবইয়ে ‘একজনরই নাম’

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন যে পাঠ্য বই করেছে স্কুলের বাচ্চাদের জন্য, সেখানে কিন্তু একজন ব্যক্তি ছাড়া কারও নাম নাই। অর্থাৎ এদেশের স্বাধীনতা, এদেশের সংগ্রাম, এদেশের মানুষের পরিবর্তনের যে ব্যবস্থা, এর কোনটাতেই কারও কোনো অবদান নেই, শুধু একজনের অবদান ছাড়া।”

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানীর বর্ণাঢ্য জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই সরকার- যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা মওলানা ভাসানীকেও স্বীকার করতে চায় না। একবারের জন্য কখনও স্বীকার করে না। ভাবতে অবাক লাগে এই মহান অসাধারণ একজন নেতা যিনি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের খেটে খাওয়া মানুষের পরিবর্তনের জন্য তার সারাটা জীবন দিয়েছেন।

“তিনি আসামে আন্দোলন করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য। তিনি বাংলাদেশের জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। এক সময় মওলানা কংগ্রেস করেছেন, এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীকালে মুসলিম লীগ করেছেন, এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ তিনি প্রতিমুহূর্তে খোঁজ করেছেন যে কোথায় কোন সংগঠন করলে এই জনগণের মুক্তি হবে।”

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট কালচারাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সালেহ মাহমুদ রিয়াদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নজমূল হক নান্নু, কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী।