ক্যাটাগরি

মামলার পেছনে টিউশনের রেষারেষি? হৃদয় মণ্ডলের তেমনই ইংগিত

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক
অতিরিক্ত জেলা জজ মোতাহারাত আক্তার ভূইয়া রোববার জামিন মঞ্জুরের পর বিকাল ৫টার পরে
তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এ সময় সেখানে হৃদয় মণ্ডলের
স্ত্রী ববিতা হাওলাদার, তাদের দুই সন্তান, আইনজীবীসহ গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

১৯ দিন কারাবাস শেষে বেরিয়ে
পরিবারকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত ছিলেন হৃদয় মণ্ডল।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে সেটি মিথ্যা। এতে স্কুলের নানা বিষয়
জড়িত থাকতে পারে।

গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে
ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছিলেন হৃদয় মণ্ডল। সেখানে একজন ছাত্র
বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের তুলনা করে কিছু প্রশ্ন করলে সেগুলোর জবাব দেন হৃদয়।

ক্লাসের এক ছাত্র ওই আলোচনা মোবাইলে রেকর্ড করে এবং তা
ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে হৃদয়ের বিরুদ্ধে
আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ হৃদয়কে
চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

ওই রাতেই স্কুলের অফিস সহকারী আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয়
অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শিক্ষক হৃদয়
মণ্ডলকে।

এ ঘটনায় শিক্ষাবিদ, অধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন
শ্রেণিপেশার মানুষ এর প্রতিবাদে সরব হয়। শ্রেণিকক্ষের আলোচনা এভাবে গ্রেপ্তারে
গড়ালে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষকদের কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেন কেউ কেউ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

এর মধ্যেই রোববার বিকালে
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন হৃদয় মণ্ডলকে।

তিনি বলেন, “স্কুলে রেষারেষি
আছে। আমি আসলে বলতে পারছি না। তবে প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও এই ঘটনা ঘটতে পারে।”

জেলে নেওয়ার কী কারণ থাকতে
পারে জানতে চাইলে হৃদয় মণ্ডল বলেন, “হয়তো আমার নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমাকে কারাগারে
রেখেছে।”

এ সময় রাষ্ট্রের কাছে পরিবারের
নিরাপত্তা চান এই শিক্ষক। এর আগে তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদারও নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের
দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

এমন ষড়যন্ত্রের কী কারণ
থাকতে পারে- প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, “যারা লেখাপড়া করে না, কিছু
বিপথগামী পোলাপান আছে, যারা হয়তো বিপথগামী স্যারদের সঙ্গে মিলে এটা করেছে।

“আমি এই মুহূর্তে কারও
নাম বলতে পারছি না। এখানে টিউশনির ব্যাপার আছে। আশপাশের অনেকেই আছে।”

ঘটনার দিনের কথা বর্ণনা
করে তিনি আরও বলেন, “ওই দিন আমি ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াচ্ছিলাম। ওরা আমাকে ধর্মীয় বিষয়ে
প্রশ্ন করছিল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। আমি এমন কোনো কথা বলিনি যেটা সমস্যা হতে পারে।
আমি বুঝতে পারিনি ওরা মোবাইলে রের্কড করছিল।“ 

ছাত্রদের গণিত ও বিজ্ঞান দুটো বিষয়ই পড়াতেন হৃদয় মণ্ডল।
তার ওপর প্রথম হামলা হয় বছর দুয়েক আগে, টিউশনি থেকে বাসায় ফেরার পথে। সর্বশেষ মাস
দেড়েক আগেও হামলাকারীরা হৃদয়ের গায়ে ইটের টুকরো ছুড়ে মারে, ঘরে দরজায় লাথিও মারে
বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।

“তাছাড়া, প্রায়ই দরজায় লাথি মেরে ‘মণ্ডল মণ্ডল’ বলে
তিরস্কার করত কে বা কারা, এখন তা আরও বেড়ে গেছে।”

হৃদয় মণ্ডল বলেন, “এর আগেও
আমাকে ঢিলা মেরেছিল। মনে হয় ছাত্ররাই। আমি দেখতে পাইনি।”

আরও
পড়ুন:

মুক্তি পেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল
 

পুরো পরিবারের নিরাপত্তা চান হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী
 

১৯ দিন পর জামিন পেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল  

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল গ্রেপ্তার: ঘটনার পূর্বাপর  

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না
হওয়ায় প্রশ্ন
  

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল কারাগারে: ‘রাষ্ট্র কি যুক্তি দিয়ে
চলছে?’
  

হৃদয় চন্দ্র মুক্তি না পেলে ‘আমাকেও গ্রেপ্তার করা
হোক’: জাফর ইকবাল
  

জজ আদালতেও জামিন মেলেনি বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের  

‘ফাঁসানো হয়েছে’, অভিযোগ হৃদয় মণ্ডলের পরিবারের  

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি