রোববার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্র এক সপ্তাহের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সেই সঙ্গে উজানে ভারতের আসা ও মেঘালয় প্রদেশের কিছু এলাকায় থাকবে ভারি বর্ষণ। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
এপ্রিলের শুরুতে উজানের ঢলে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি হয় প্রাথমিক হিসাবে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণায় নদ-নদীর পানি বাড়ায় তলিয়েছে ফসলি জমি।
ইতোমধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পাহাড়ি ঢলে দুটি বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে কৃষকরা ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বাঁধ কারও অবহেলায় ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। বোরো ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন উপমন্ত্রী।
বর্তমান পরিস্থিতি
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমছে। তবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ-ভারতের আবহাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের কিছু স্থানে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় নদ-নদীর পনি দ্রুত বাড়লেও বিপদসীমার নিচে থাকতে পারে।
২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্ত নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। এই পানি প্রবাহিত হয় ভাটির হাওরের নদ-নদীতে।
প্রবল পানির চাপে হাওরের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যায় প্রথম ধাক্কাতেই; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাউবোর বাঁধের বাইরের এলাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং-এর একজন কর্মকর্তা জানান, ছয়টি জেলার হাওর এলাকায় এবার বোরো ফসল রয়েছে ৫,৫৬,০২৩ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৬,৭৯৮ হেক্টর (দশমিক ৭৫ শতাংশ) আবাদি জমি অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
এরমধ্যে সিলেটে ১,২১০ হেক্টর, সুনামগঞ্জে ৫,০৫০ হেক্টর, নেত্রেকাণায় ১৩৩ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ৩৭৯ হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ১৮ হেক্টরে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ও সিলেটে নদ-নদীর পানিও কমছে।
সপ্তাহের শেষে শঙ্কা
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পযন্ত উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা) এবং মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
এতে উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, যদুকাটা, লুভাছড়া, সারিগোয়াইন, ধরাগাং, পিয়াইন, ঝালুখালি, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, ধনু-বাউলাই নদ-নদীর পানি বেড়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
সেক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহের শেষার্ধে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার কিছু স্থানে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
বৈশাখের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টির আভাস
উজানে ভারি বর্ষণের আভাসের পাশাপাশি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আগামী কয়েকদিন হালকা বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, সৈয়দপুরে বৃষ্টি হয়েছে। এসময় সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
রোববার আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানান, চৈত্রের শেষ সময়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে।
কুমিল্লা অঞ্চলসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
এদিকে বৈশাখের শুরুতে রাজধানীসহ অনেক এলাকায় তাপমাত্রাও বাড়ছে অনেক এলাকায়। শুষ্ক আবহাওয়ায় গরমের অনুভূতিও বেড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়।
রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন