সোমবারেই এ বৈঠক হওয়ার কথা বলে জানায় বিবিসি। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বাৎসরিক বৈঠক ২০১৮ সাল থেকেই চালু করা হয়েছিল। যেটি ‘২+২ ডায়ালগ’ নামে পরিচিত। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করতে এই বৈঠক চালু হয়।
এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির বর্তমান অবস্থায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত করতে চায়। চীনকে সামাল দিতে এশিয়ার দেশ হিসেবে কৌশলগত করণে ভারতকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। এ কারণে চীনের সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে ভারতকে সাহায্য করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশ নানা বিবৃতিতে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার কথা বলেছে। কিন্তু এখন গোল বেঁধেছে ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। ওই যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।
দিল্লি কড়া ভাষায় ইউক্রেইনে আগ্রাসন নিয়ে মন্তব্য করলেও কখনো সরাসরি মস্কোর সমালোচনা করেনি। এছাড়া, ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে কয়কটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে তার সবগুলোতে ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে ভারত।
পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার উপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সেগুলোও কৌশলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তেল বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রাশিয়া ভারতকে ছাড় মূল্যে তেল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ওই প্রস্তাব গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নিজস্ব ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণেও ভারত তাদের জোট নিরপক্ষেপ অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে। কারণ, মস্কো দিল্লির সময়পরীক্ষিত মিত্র। এছাড়া, ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রায় ৫০ শতাংশের যোগানদাতা দেশ রাশিয়া।
ভারতকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র:
ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থানে চরম দ্বিধায় পড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চাইছে, রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার যে কৌশল তারা নিয়েছে দিল্লি তার অংশ হোক। এখন পর্যন্ত দিল্লি ঠিক তার উল্টো অবস্থানে রয়েছে।
অথচ, এজন্য দিল্লিকে চাপে ফেলতে পারছে না ওয়াশিংটন। কারণ, চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে কূটনীতিক বা সামরিক যেকোনো ক্ষেত্রেই দুর্বল করে দিলে আদতে যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণে দিল্লির সঙ্গে কী করা যায় সেটা নিয়ে হোয়াইট হাউজে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ইস্যুতে সরাসরি ভারতেও সমালোচনা করতে পারছে না ওয়াশিংটন। তবে তারা যে বিবৃতি দিচ্ছে সেটাকে ‘মৃদু সতর্কবার্তা’ বলা যায়।
ইউক্রেইন ছাড়া আর কী ইস্যু আছে:
সোমবারই ওয়াশিংটনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের বৈঠক হওয়া কথা।
উভয় পক্ষ ইউক্রেইন নিয়ে নিজেদের অবস্থানে বেশ স্পষ্ট। কিন্তু ইউক্রেইন ইস্যু ছাড়াও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভারতকে মিত্র হিসেবেই দেখে ওয়াশিংটন।
এদিকে, উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এমন অনেক সম্ভাবনা রয়েছে যেটা এতদিনেও কাজে লাগানো হয়নি। তারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২১ সালের মধ্যে ১১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এবং ভবিষ্যতে সেটা ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নিত করতে চায়।
নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনতে এবং রাশিয়ার অস্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রয়োজন। মস্কো এখনো ভারতের সব থেকে বড় অস্ত্রের যোগানদাতা। যদিও এই নির্ভরশীলতা ৭০ শতাংশ থেকে নেমে ৪৯ শতাংশ হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্রের যোগানদাতা দেশ ছিল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স ও ইসরায়েলের পেছনে পড়ে যায়। ওয়াশিংটন এবং দিল্লি উভয় পক্ষই এ অবস্থার উন্নতি চায়।