ক্যাটাগরি

বঙ্গভ্যাক্স আটকালো কোথায়?

গ্লোব বায়োটেক বলছে, বানরের ওপর তাদের এই টিকার পরীক্ষা ‘সফল’ হয়েছে। এখন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য সব প্রস্তুতিও তারা নিয়ে রেখেছে। সেজন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) নৈতিক অনুমোদনও তারা পেয়েছে চার মাস আগে। কিন্তু ট্রায়াল শুরুর অনুমতি মিলছে না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদ্প্তর জানিয়েছে, মানুষের দেহে বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘সব প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করলে তবেই এ টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পাবে।

যেভাবে শুরু

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে ২০২০ সালের ২ জুলাই টিকা তৈরির কথা জানায় গ্লোব বায়োটেক। খরগোশের উপর টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘সফলতা’ দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এরপর মানবদেহেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে চেয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে আবেদন করে। বিএমআরসি তখন বানর কিংবা শিম্পাঞ্জির উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে সংশোধিত আবেদন জমা দিতে বলে। তা মেনে ৫৬টি বানরের উপর পরীক্ষা চালায় গ্লোব।

বিএমআরসির নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে চালানো বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফলের প্রতিবেদন গত বছরের ১ নভেম্বর বিএমআরসিতে জমা দেয় গ্লোব বায়োটেক।

২১ নভেম্বর বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটির সভায় মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার নৈতিক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুদিন পর গ্লোবকে সেই চিঠি দেয় বিএমআরসি।

এরপর টিকাটি মানুষের দেহে প্রয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।

গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উপদেষ্টা কমিটি গ্লোব বায়েটেকের দেওয়া প্রটোকল পর্যালোচনার পর কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জানিয়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর চিঠি দেয়। ওই দিনই সংশোধিত প্রটোকল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়।

এরপর গত ৯ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বঙ্গভ্যাক্সের টিকার অনুমোদনের বিষয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।

“সেই পর্যবেক্ষণগুলো জানিয়ে ২৯ মার্চ আমাদেরকে একটি চিঠি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ৩ এপ্রিল ওই চিঠির জবাব এবং বিভিন্ন তথ্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিয়েছি আমরা,” বলেন মহিউদ্দিন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসা

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বঙ্গভ্যাক্সের টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়ার আগে মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা গ্লোব বায়োটেককে জানিয়েছে।

“বিস্তারিত বলা যাবে না। তবে সেইফটির বিষয়ে সরকার কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। জনগণের ওপর প্রয়োগ করা হবে, এটার নিরাপত্তার বিষয়টি যেন ভালোভাবে দেখা হয়।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণের চিঠি গত মাসে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আগামী সপ্তাহে উত্তর দিয়ে দিব।”

অনুমোদন নীতিমালা মেনে

নিয়ম অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বঙ্গভ্যাক্স টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বঙ্গভ্যাক্সের টিকার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আমরা একটা সভা করেছি। আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল যেগুলো মিটআপ করার জন্য বলেছি।

“আরেকটা বিষয় হল, যে কোনো টিকার উৎপাদন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রেই একটা গাইডলাইন থাকে। তেমনি টিকার অনুমোদনের একটা নিয়ম রয়েছে, এগুলো ফলো করে কাজ করতে হবে। ফাইনালি ডব্লিউএইচওর অ্যাপ্রুভাল লাগবে। এগুলো সব ঠিক থাকলে আমরা তাদের বিষয়টি বিবেচনা করব।”

মানবদেহে প্রয়োগের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আশা প্রকাশ করে গ্লোব বায়োটেকের মহিউদ্দিন বলেন, “আমরা যেহেতু তাদের প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি, আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পাব।”

তবে ট্রায়ালের জন্য আবার টিকা উৎপাদন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা ট্রায়ালের জন্য টিকা উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছিলেন। সেই টিকা উৎপাদন করে বানরের ওপর প্রয়োগ করেছেন। এখন মানবদেহে ট্রায়ালের জন্য আবার টিকা উৎপাদন করতে হবে।

“এটা আমরা তৈরি করব অনুমতি পাওয়ার পর। কারণ তৈরি করলে রাখলে একটা সময় পর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। যখন অনুমতি পাব, তখন আমরা টিকা উৎপাদন করব। পরে আমাদের সিআরও (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন) প্রতিষ্ঠানকে আমরা টিকা দেব, তারা মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগ করবে।”

যারা টিকার আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করে ক্লিানিক্যোল গবেষণায় বিশেষায়িত কোনো সংস্থা। বঙ্গভ্যাক্স টিকার সিআরও হিসেবে রয়েছে ক্লিনিক্যাল রিসার্স অর্গানাইজেশন লিমিটেড।

এই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেছিলেন, প্রথম দফায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৬৪ জন সুস্থ ব্যক্তির উপর এ টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। তবে অনুমোদন না পাওয়ায় তা আর এগোয়নি।  

মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রায়ালের জন্য যে ৫৬টি বানর ধরা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে কিছু বানর বাছাই করে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। সেগুলো এখনও গবেষণাগারে আছে।

“বিএমআরসির একটি দল গত সপ্তাহে বানরগুলো দেখে গেছেন। মানবদেহে টিকা প্রয়োগের অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা সেগুলো আবার বনে ছেড়ে দেব।”

গ্লোব বায়োটেকের দাবি, বানরের ওপর এই টিকা প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি ডেল্টার মত ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও কার্যকর। প্রাথমিক ফলাফলে ভ্যাকসিনটি বানরের শরীরে ‘নিরাপদ প্রমাণিত’ হয়েছে এবং ‘কার্যকর অ্যান্টিবডি’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

পুরনো খবর


বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন
 


করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের সম্ভাবনা কতটা?
 


বানরের উপর বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষায় ‘ফল মিলছে’
 


বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ‘৬৪ জনের উপর’
 


কোভিড-১৯: গ্লোবের টিকা কতদূর?
 


শর্তসাপেক্ষে গ্লোবের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নীতিগত সিদ্ধান্ত
 


বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষায় বানর ধরতে গিয়ে ‘লাঞ্ছিত’