নাঈমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও চিরাগ জানির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মঙ্গলবার ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ৮৩ রানে হারাল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট এ দিন ছিল ভীষণ ব্যাটিং দুরূহ। বল ব্যাটে এসেছে থমকে। বাউন্স ছিল অসমান, কিছু বল লাফিয়েছে আচমকা, কিছু নিচু হয়েছে অনেক। মেঘলা আকাশ ও গুমোট চারপাশ মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজটা হয়ে ওঠে আরও কঠিন।
বৃষ্টিতে ৪৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে রূপগঞ্জ অলআউট হয় ১৬৮ রানে। সেই রানই ব্রাদার্সের জন্য হয়ে ওঠে পাহাড়সম। স্রেফ ২২.২ ওভারেই গুটিয়ে যায় তারা ৮৫ রানে।
৪৫ রানের লড়িয়ে ইনিংসের সঙ্গে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ নাঈম। চলতি লিগে ৯ ম্যাচে ৪ বার তার হাতে উঠল ম্যাচ সেরার ট্রফি।
ভারতীয় অলরাউন্ডার চিরাগ জানি ৪ উইকেট নেন ২২ রানে।
টুর্নামেন্ট জুড়ে ধুঁকতে থাকা রূপগঞ্জের টপ অর্ডার ভালো করতে পারেনি এ দিনও। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দল ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে হারায় দ্রুতই। প্রথম ওভারে আবু হায়দারকে কাভার ড্রাইভে চার মারা তরুণ ওপেনার পরের ওভারে আউট হয়ে যান ইফরানের বাড়তি লাফানো বলে।
ইফরান একটু পর আরও বড় ধাক্কা দেন রূপগঞ্জকে। পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান রূপগঞ্জের বড় ভরসা চিরাগ (৮)।
অনেকটা থমকে থাকা ইনিংসকে গতি দিতে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে সেই ফাটকা কাজে লাগেনি। রূপগঞ্জ অধিনায়ক বোল্ড হয়ে যান শ্রীল্কান চতুরঙ্গা ডি সিলভার বাঁহাতি স্পিনে ড্রাইভ করতে গিয়ে।
এরপর রকিবুল হাসান ও ইরফান শুক্কুরও যখন ফিরে গেলেন, ২২তম ওভারে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে রূপগঞ্জ।
নাঈম ও সাব্বির রহমান সেখান থেকে টেনে তোলেন দলকে। নাঈম এক প্রান্ত আগলে রাখেন পরম নির্ভরতায়। সাব্বির সাবধানী ব্যাটিংয়ের ফাঁকে খেলেন সহজাত আগ্রাসী কিছু শট। দুজনে গড়েন ৮১ রানের জুটি।
দারুণ খেলতে থাকা সাব্বির নিজের উইকেট শেষ পর্যন্ত উপহার দেন প্রতিপক্ষকে। চতুরঙ্গার বলে শাফল করে স্কুপ করে গিয়ে হারান তিনি অফ স্টাম্প। প্রতিকূল উইকেটে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ রান করেন তিনি কেবল ৫০ বলে। সেটিই হয়ে থাকে ম্যাচের সর্বোচ্চ ইনিংস।
পরের ওভারেই সোহাগ গাজীকে উড়িয়ে সুইপ করে নাঈম আউট হন ৮১ বলে ৪৫ রান করে। পরে তানবীর হায়দার ও মুক্তার আলিরা পারেননি ঝড় তুলতে। রূপগঞ্জ তাই পারেনি ১৭০ ছুঁতেও।
ব্রাদার্স রান তাড়ায় ২ ওভারেই তুলে ফেলে ১৭ রান। তবে রাশ টেনে ধরতে সময় নেয়নি রূপগঞ্জ। অভিজ্ঞ ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন বোল্ড হয়ে যান নাবিল সামাদের আর্ম ডেলিভারিতে।
চতুর্থ ওভারেই নাঈমের অফ স্পিন আক্রমণে আনেন মাশরাফি। নিজের প্রথম ওভারে ১১ রান দেওয়ার পরও তাকে বোলিংয়ে আনেন আরেক ওভারে। সাফল্যও ধরা দেয় তাকে। ব্রাদার্স অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে (১৩ বলে ৭) এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি।
৪ উইকেট শিকারি চিরাগ জানিকে অধিনায়ক মাশরাফির অভিনন্দন। ছবি: বিসিবি।
আশরাফুল যদিও আউট হয়ে আপত্তি জানান বেশ। আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে। তবে ভিডিও দেখে তাকে পরিষ্কার আউট বলেই মনে হয়েছে।
ব্রাদার্স তবু রান রেট ধরে রাখে ভালো। ৮ ওভার শেষে রান দাঁড়ায় তাদের ৪১। ওপেনার সাদিকুর রহমান তখন ক্রিজে ৩ চারে ১৬ বলে ১৬ করে।
নবম ওভারে আক্রমণে এসে মাশরাফি প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন সাদিকুরকে। এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ব্রাদার্স। তাদের মিডল অর্ডার ধসে পড়ে চিরাগের দারুণ বোলিংয়ে।
৬২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও কিছুটা আশা তাদের ছিল। ক্রিজে তখন সোহাগ ও চতুরঙ্গা। দুজনই এবারের লিগে লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলেছেন দারুণ কিছু ঝড়ো ইনিংস।
কিন্তু এ দিন পারেননি তারাও। চিরাগকে উড়িয়ে মেরে কাভারে ধরা পড়েন সোহাগ। মাশরাফিকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারলেও চতুরঙ্গা বোল্ড হয়ে যান নাঈমকে সুইপ করার চেষ্টায়। ব্রাদার্স তাই যেতে পারেনি একশর কাছাকাছি।
৯ ম্যাচে রূপগঞ্জের এটি সপ্তম জয়। প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে যাওয়া দল জয় পেল টানা ৬ ম্যাচে। ব্রাদার্স ৯ ম্যাচে হেরে গেল ৭টিতেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ: ৪৪.১ ওভারে ১৬৮ (তানজিদ ৪, রকিবুল ২৪, চিরাগ ৮, মাশরাফি ৭, নাঈম ৪৫, ইরফান ০, সাব্বির ৪৬, তানবীর ১৪, মুক্তার ১, মেহেদি রানা ৪, নাবিল ০*, আবু হায়দার ৯-০-৪৫-১, ইফরান ৮.১-১-২৩-৪, চতুরঙ্গা ৯-১-২৮-২, সাকলাইন ৯-১-৩০-১, সোহাগ ৯-১-৩৬-২)।
ব্রাদার্স: ২২.২ ওভারে ৮৫ (ইমতিয়াজ ৮, সাদিকুর ১৬, আশরাফুল ৭, মাইশুকুর ১৪, মিনহাজুল ৬, আমিনুল ৪, সোহাগ ২, চতুরঙ্গা ১৬, আবু হায়দার ২, ইফরান ০*, সাকলাইন ০; চিরাগ ৬-০-২২-৪, মেহেদি রানা ২-১-৮-১, নাবিল ৪-২-৪-১, নাঈম ৩.২-০-২০-৩, মাশরাফি ৭-০-৩০-১)।
ফল: লেজেন্ডস অপ রূপগঞ্জ ৮৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম ইসলাম।