আর্থিক দুর্দশায় থাকা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশেকে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘চলমান অর্থনৈতিক বিষয়’ তুলে ধরতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করার মত, এর চাইতে লজ্জাকর বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।“
বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, বিদেশি ঋণের বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশের ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, “একটা দেশ দেউলিয়া হয় কখন, যখন সে তার ঋণ শোধ করতে পারে না। আমাদের যে ঋণ আছে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরও আমরা যদি ধরি তাহলে ঋণ পরিশোধে কোনো রকম কোনো একটা ইন্সটলমেন্ট ফেইল করার কোনো সম্ভাবনা আমাদের নাই।“
আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত বিচার বিশ্লেষণ করে নিয়েছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কায়কাউস বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য উনি (প্রধানমন্ত্রী) আজকে (মঙ্গলবার) তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন। প্রতিটি তথ্য উপাত্ত উনি নিজে বিশ্লেষণ করেছেন।
“আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা আমরা উনাকে আগেও বলেছি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে সেটা প্রতিটি তথ্য উপাত্ত ঘেটে নিশ্চিত হয়েছেন যে, ‘ঠিকই বলেছো’। তার আগে কিন্তু বলেননি।“
এদিন সকালে গণভবনে ‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামস্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক এক সভায় অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ বিভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব বলেন, “এটিই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পার্থক্য এবং এটি হচ্ছে বাংলাদেশের সকল কর্মকর্তাদের সাহস।“
তিনি বলেন, “আমার আজকে খুব উষ্মার সাথে বলতে হচ্ছে আমরা এতবার প্রমাণ করেছি, আমরা পারি এবং যারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে- তারা যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে তার জন্য তারা কতটুকু লজ্জিত হবে। আমার শুধুমাত্র সেই প্রশ্নটা থাকা উচিত।“
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব জানান, কোভিড-১৯ অভিঘাত কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়াতে চারটা বড় ইকোনমি। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ। চারটার তথ্য উপাত্ত যদি আপনারা দেখেন এখানে জিডিপিতে অবশ্যই ভারতের জিডিপি আমাদের চেয়ে বড়। দ্বিতীয় আমরা, তৃতীয় পাকিস্তান ও চতুর্থ শ্রীলঙ্কা।
“শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের জিডিপি যদি আপনি যোগ করেন বাংলাদেশের ডিজিপি তারচেয়ে বড়। বাংলাদেশ যে এক্সপোর্ট করে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান যে এক্সপোর্ট করে এ দুটোর যোগফলের চেয়ে বেশি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করে।“
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্য তুলে ধরে আব্দুর রউফ বলেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যে রিজার্ভ আছে, এদের দুটোকে যদি যোগ করেন তার ডবল আমাদের কাছে আছে।“
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যারা শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশকে তুলনা করে তারা বাংলাদেশকে হেয় করে। কোনোভাবেই এটা তুলনা করার কোনো কারণ নাই।“
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১২ শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “এ অনুপাত শ্রীলঙ্কার প্রায় ৪৮ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা যে ঋণটা করেছে বিদেশ থেকে তার সুদের হার হল গড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর আমরা যে বিদেশ থেকে ঋণ এনেছি তার সুদের হার হলো ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
“এ সমস্ত জিনিস থেকে আমরা বলতে চাচ্ছি যে আমাদের সামষ্ঠিক অর্থনীতির যে অবস্থা সেটার সাথে আমরা শ্রীলংকা বা পাকিস্তান কারও সাথে আমরা তুলনা করতে চাই না। আমরা মনে করি আমরা নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলছি।“
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
বিদেশি ঋণ ঝুঁকির নিচে, অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর