সেটা হতে পারে হঠাৎ দমবন্ধভাব হওয়া, হৃদস্পন্দন
বেড়ে যাওয়া বা নিজেকে একা করে ফেলার মতো পরিস্থিতি।
মানসিক আঘাত থেকে এই ধরনের দৈহিক অসুস্থতা
বা ‘ট্রমা’ সামলাতে প্রয়োজন মনোবল ও সাহসিকতা। এজন্য কিছু পন্থাও রয়েছে।
কানাডা’র ভ্যানকুভার’য়ে অবস্থিত বর্ণবৈষম্যের
শিকার হওয়া কৃষ্ণদের মানসিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘কুয়ার ট্র্যান্স ব্ল্যাক ইন্ডিজিনিয়াস
পিপল অফ কালার’য়ের নিবন্ধিত ক্লিনিক্যাল পরামর্শক ও মানসিক আঘাত বিশেষজ্ঞ থোকো ময়ো
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমরা যখন কোনো ‘ট্রমা’ রোগীকে দেখি
তখন তা আমাদের মস্তিষ্ক, পেশি ও হৃদয়কেও আন্দোলিত করে। রোগীটি কেনো আমাদের কাছে এসেছেন
এবং কী অনুভব করছেন এসব কিছু বিবেচনা করে একটা সেশন পরিচালনা করা হয়।”
মানসিক ও শারীরিক আঘাত বা ‘ট্রমা’ সামলানোর
বিষয়টি প্রত্যেকের জন্য আলাদা।
ভ্যানকুভারের প্রত্যায়িত পিলাটিজ প্রশিক্ষক
এবং ‘এ লা লিনইয়ে মুভমেন্ট মেথড’য়ের প্রতিষ্ঠাতা কেইটি ম্যাকেঞ্জি বলেন, “এই ধরনের
রোগী অতীতের খারাপ ঘটনায় আটকে থাকেন।”
একই প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “যখন কেউ
অন্যের মাধ্যমে অনুভব করতে পারে যে, তার নিজের শরীরে কী চলছে তখনই সে সেখান থেকে সরে
এসে ভয়কে জয় করতে পারে।”
ময়োর মতে, কেউ যদি মনে করেন, শারীরিক
ট্রমাতে আবদ্ধ হয়ে আছেন তাহলে যে কোনো একজন পেশাদার পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া উচিত।
এর ফলে মানসিক চাপ কমবে ও ট্রমা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে।
এছাড়াও, মানসিক আঘাত কমাতে সহায়তা করে
এমন কয়েকটি কাজ সম্পর্কে জানান তিনি।
শ্বাস: ময়ো
এবং ম্যাকেঞ্জি দুজনেই শ্বাস প্রশ্বাসের কৌশলকে এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত
করেন।
ময়ো ‘বক্স ব্রিদিং’ (যেখানে চার সেকেন্ড
শ্বাস ধরে রাখা হয় এবং চার সেকেন্ড সময় ধরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করা এবং একইভাবে আবার শ্বাস
গ্রহণ করা) এবং ‘বাম্বেলবি ব্রিদিং’ (শ্বাস গ্রহণ করা এবং গুন গুন শব্দ করে তা ত্যাগ
করা)’কে প্রশান্তি ও পুনরায় কেন্দ্রীভূত করার ভালো উপায় বলে মনে করেন।
তিনি ‘তিন, দুই, এক’ পদ্ধতি অনুসরণ করার
পরামর্শ দেন।
এই পদ্ধতিতে প্রথমে চোখের সামনে রয়েছে
এমন তিনটা জিনিসের নাম, শোনা যাচ্ছে এমন তিনটি জিনিসের নাম এবং অনুভব করছেন এমন তিনটা
জিনিসের নাম নিতে বলা হয়।
এরপর বড় একটা শ্বাস নিয়ে একই কাজ দুইটা
করে এবং এরপর একটা করে জিনিসের নাম পুনরাবৃত্তি করা হয়। এটা শরীর ও মনকে শান্ত করতে
সহায়তা করে।
গতি: ম্যাকেঞ্জির
বলেন “নিরাময়ের পেছনে গতিশীলতার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যা মন, শ্বাস ও শরীরকে
একসঙ্গে সচল ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।”
তার মতে, গতিশীলতার ফলে শরীরের ওপর চাপ
পড়ে। ফলে পেশি সচল হয়। নড়াচড়ায় যদি কোনো সমস্যা বা অস্বাভাবিকতাও দেখা দেয় তাহলে সেদিকে
নজর না দিয়ে বরং স্নায়ুবিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
কারণ চলাফেরা অর্থাৎ গতিশীলতা বৃদ্ধি
শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ বাড়ায়। ফলে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ
করা যায়। শরীর নিজেই নিজের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে যা একটা ভালো দিক।
সম্পৃক্ত থাকা: ময়ো বলেন, “বিচ্ছিন্নতা হল সবচেয়ে খারাপ জিনিসগুলির মধ্যে একটি যা মানুষ
সহজেই করতে পারে। আর করতে আকৃষ্ট হয়।”
“মানসিক আঘাতের সঙ্গে শরীরের লড়াই করার
সবচেয়ে বড় উপায় হল যোগাযোগ বাড়ানো।”
তাই, মানসিক আঘাত কমাতে যতটা সম্ভব কাছের
বন্ধু, পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো উচিত। দলগতভাবে সময় কাটানো বা কাছের
মানুষদের কাছাকাছি থাকা একাকিত্বের অনুভূতি দূর করে। ফলে মানসিক চাপ সামলানো সহজ হয়।
ছবির মডেল: আলিফ। ছবি: ই স্টুডিও।
আরও পড়ুন